ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সফল হোক বই উৎসব

পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণ প্রস্তুতি

পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণ প্রস্তুতি

২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার জানুয়ারি মাসের শুরুতে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে আসছে। বছরের শুরুর দিন ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসব পালন করা হয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী তার এই মহতি কার্যক্রমটি অব্যাহত রাখবেন সেই প্রত্যাশা সবার। শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বলে আসছেন, শিক্ষায় ব্যয় অভিভাবকের জন্য বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগ পরবর্তী জীবনে কাজে লাগে। বিশেষ করে কন্যাশিশু শিক্ষার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকন্যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। ছাত্রীদের বিনা বেতনে লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন তিনি। ফলে আমাদের দেশে কোনো কন্যাশিশু এখন আর স্কুলের বাইরে নেই। সেই সঙ্গে অভিভাবকরাও সচেতন হয়েছেন। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই পেলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে পারেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে, বছরের শুরুতে নতুন ক্লাসে ভর্তি, স্কুলের বেতন, পাঠ্যপুস্তক কিনতে গিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে যে পেরেসানি ছিল- এখন তা আর নেই। এবারও নতুন বছরে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়ার সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ছাত্র-শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের প্রত্যাশা, এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ যেন তাদের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো নতুন বই তুলে দিতে গিয়ে গত বছর কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছি। কাগজ আমদানি ও মান নিয়েও ক্ষোভ ছিল- প্রেস মালিক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বই বিতরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিল এনসিটিবি। তবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি। নতুন বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন। আর এর আগেই জেলা-উপজেলায় বই পৌঁছে দিতে পুরোদমে চলছে মুদ্রণ ও বই বাঁধাইয়ের কাজ। এনসিটিবির তথ্যমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের ৯ কোটি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। প্রাথমিকের বই ছাপানোর পর তা এরই মধ্যে উপজেলায় পাঠানোও হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ হবে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। প্রেসে গেলে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণির বইয়ের কাজ এখনো বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ক্রয় কমিটির সভা হলে পাণ্ডুলিপি দ্রুত প্রেসে পৌঁছে যাবে। বই পেতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লাগতে পারে। গত বছর কাগজের বাজার অস্থিতিশীল ও প্রেস মালিকদের কিছুটা হেয়ালির কারণে বই পেতে বিলম্ব হয়েছিল। এবার তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এবার কাগজের দামও স্থিতিশীল। সঠিক সময়ে বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাবে- এমনটাই আশা করছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে- ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে- ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি। নতুন কারিকুলামের কারণে প্রতি ক্লাসে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার কম ছাপানো হচ্ছে- ৩ কোটি বই। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন কারিকুলামের বই মুদ্রণ করা হচ্ছে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির নতুন কারিকুলামে বই তৈরি করা হবে। সারা দেশে ১ জানুয়ারি বই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া, সে এক বিরাট মহাযজ্ঞ। কাজটি প্রকাশনা সংক্রান্ত হওয়ায় বেশ জটিল। এখানে মেধার চর্চার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সামান্য ভুলের কারণে অনেক বিপত্তি ঘটতে পারে। আর এই বিপত্তির জন্য পরোক্ষভাবে সরকারকেই দায় গ্রহণ করতে হয়। সে কারণে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে অধিকতর সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদন করার মধ্যেই কৃতিত্ব নিহিত। সংশ্লিষ্ট সবারই প্রত্যাশা- এবারের বই উৎসবও সফল হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত