পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ঘোষণা

কল্যাণ হোক শ্রমিকদের, নামধারী নেতাদের নয়

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এই ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় ওভারটাইম ছাড়া অন্য ভাতা মিলে একজন গার্মেন্ট শ্রমিক আরো কিছু টাকা তুলতে পারবেন। তারপর রয়েছে দুই ঈদে দুটি বোনাস। ওভার টাইমের দিনে দেয়া হয় নাস্তা। গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও তাদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো কোনো কারখানার নিজস্ব পরিবহণ রয়েছে। ওই পরিবহণে নামমাত্র ভাড়ায় দিয়ে শ্রমিকরা যাতায়াত করতে পারেন। প্রতিটি কারখানায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং স্যানেটারি সুবিধাও বেশ ভালো। যারা আমাদের দেশের পোশাক কিনে, তারা এসব বিষয় বিবেচনা করেই পোশাক কেনার আদেশ দিয়ে থাকেন। গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্য খুব বেশি একটা লেখা পড়ারও প্রয়োজন হয় না। সে কারণে আমাদের দেশের গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দেয়ার পর মালিকপক্ষ বলেছে, ‘ভালো বেতন বাড়ানো হয়েছে’। তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা হওয়ার পর তাদের আর কোনো কারখানায় কাজ করতে হয় না। তারা বিলাসী জীবনযাপন করেন। তারা কারণে অকারণে বিদেশ ভ্রমণ করেন। তারা নিজস্ব ফ্ল্যাট কিংবা গাড়িতেও চলাফেরা করেন। নিজেদের সংগঠন ও এনজিও চালানোর জন্য তারা নানা রকম অপেশাদারিত্ব কাজে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশে গত কয়েক দিন ধরে গার্মেন্ট খাতে যে অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তার মূলে নাকি ছিল এক শ্রেণির শ্রমিক নেতাদের ইন্দন। এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার হোক, সেটা দেশ-বিদেশে অনেকেই চায় না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া অনেকের কাম্য নয়। তাই গার্মেন্ট শিল্পে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা গেলে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করা সহজ হবে।

শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, সরকার মালিকদের স্বার্থরক্ষা করে, শ্রমিকদের নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, শ্রমিক না হয়ে শ্রমিক নেতা হওয়া যায়, এটা বাংলাদেশেই বোধহয় সম্ভব। শ্রমিক নেতাদের আর্থিক অবস্থা এত ভালো থাকে কীভাবে, সেটার খবর কি আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রাখেন? একজন শ্রমিক নেতা বিনা পরিশ্রমে বিলাসী জীবনযাপন করেন কীভাবে- সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকের অজানা।

গার্মেন্ট কারখানার পরিবেশ এখন অনেক উন্নত হয়েছে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা কাজ করছেন। তাদের মধ্যে যথেষ্ট আত্মতৃপ্তি রয়েছে। শ্রমিকদের ব্যবহার করে যাতে কোনো অশুভ শক্তি তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মজুরি মনপূত না হওয়ায় আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন গার্মেন্ট নেতারা। তাদের কাছে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো পছন্দের নয়। তবে আমাদের দেশের শ্রমিকরা কী বলেন, সেটা আগে জানা উচিত। শ্রমিকরা খুশি থাকলে তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে কারখানার উৎপাদন বেশি হবে। মালিকের অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের ভাগ্যেরও উন্নয়ন হবে। একটা গার্মেন্ট কারখানা চালু করতে কত টাকা ব্যয় হয়, সেই হিসাব আমাদের দেশের শ্রমিক নেতাদের কাছে আছে কি না সন্দেহ। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, সেই টাকা যদি ব্যবসা করে তারা তুলতে না পারেন তাহলে আগামীতে আর কেউ নতুন কারখানা চালু করবে না। একটা কারখানা চালু হলে কতজন বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় সেই হিসাবটাও থাকতে হবে। মালিক পক্ষ মনোবল হারালে এই শিল্পের কোনো বিকাশ হবে না। দেশের বেকারত্ব দিন দিন বাড়বে। আমাদের দেশে শিক্ষত-অশিক্ষিত সব শ্রেণির মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে গার্মেন্ট শিল্পে। তাই এই শিল্প যাতে বেঁচে থাকে, সেই মনোভাব সবার মধ্য গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। করোনার সময় তিনি শ্রমিকদের বেতনভাতা প্রদান করতে মালিকদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছেন। গার্মেন্ট মালিকপক্ষ নতুর মজুরির ঘোষণায় খুশি। তারা বলেছেন, বর্তমান বাজার বিবেচনায় ‘উন্নত’ মজুরি কাঠামোই নির্ধারণ হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থায় সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। বাংলাদেশের ক্রয়াদেশও কমে এসেছে। দেশেরও অর্থনৈতিক অবস্থাও স্থিতিশীল নয়। এ সময়ে এটা একটা ভালো মজুরির ব্যবস্থা করা কঠিন। তারপরও ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। এটাই তো শেষ নয়। আগামীতেও বেতন বাড়ানোর সুযোগ আসবে।