ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুশ্চিন্তামুক্ত বার্ষিক পরীক্ষা

দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ
দুশ্চিন্তামুক্ত বার্ষিক পরীক্ষা

বিএনপির ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে চতুর্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি আজ সকাল ৬টায় শেষ হলো। এরই মধ্যে এসব দল একদিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী দিনে আবারও অবরোধ আসছে বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। অবরোধ কর্মসূচির পর কঠোর কর্মসূচি হিসেবে নাকি অসহযোগ আন্দোলন আসছে। এমনি আশঙ্কা নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা আসলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মনে এমনিতে একটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করে। সুস্থ শরীর নিয়ে সন্তানরা ঠিকমতো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেনা কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো শেষ নেই।

আমাদের দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। যে কোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে নানা রকম দুর্ঘটনা। ক্ষতবিক্ষত হতে পারে শিক্ষার্থীর শরীর। মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরীক্ষার সময়টিতে দেশে একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ একান্ত দরকার। তবে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ দেবে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক রয়েছে। শিগগিরই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সেই নির্বাচন বানচাল করার জন্য ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিদেবে- এমনটিই ধারণা করছেন অসহায় অভিভাবকরা। আগামী দিনে যদি বিএনপি যানবাহনে আগুন কিংবা রাজপথের জ্বালাওপোড়াও কর্মসূচি অব্যাহত রাখে, তবে অভিভাবকরা ঘরে শান্তিতে থাকতে পারবেন না। ভয়ার্ত মন নিয়ে স্কুলের বাইরে তাদের অবস্থান করতে হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ঘরের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার পরও তাদের দুশ্চিন্তার কোনো শেষ নেই। কখন কোথা থেকে আগুন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যায়, সেই চিন্তায় তারা মহান সৃষ্টি কর্তার নাম স্মরণ করতে থাকে।

এভাবে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার সময়টি কাটাতে হবে। দুশ্চিন্তা শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে তাদের টেনশন বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিএনপি গত ১৫ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে পারেনি। আর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসায় সময়টিতে কী করতে পারবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এত বছর যেহেতু সরকার পরিবর্তন হয়নি। তার আর সামান্য কয়েকটি দিন এ দেশের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আগামী দিনগুলোতে বিএনপি যদি কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি না দেয়, তাহলে তাদের সন্তানের মতো এদেশের আপামর জনগণের সন্তানরাও দুশ্চিন্তামুক্ত পরিবেশে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারবে। সেই সুযোগটি করে দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে। দেশের যে কোনো দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের শিক্ষাজীবন ও শিক্ষার্থীরা।

বিগত হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে আমাদের সন্তানরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনলাইনে তাদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে গেছে। বৈশ্বিক করেনার সময়ে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকাকালে অনলাইনে তাদের ক্লাস করতে হয়েছে। রাজধানীতে অনলাইন ক্লাস করা কিছুটা সহজ হলেও সারা বছর ঠিকমতো অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যায়নি এমন স্কুলেরও সংখ্যাও কম নয়। হরতাল-অবরোধের কারণে বছর শেষে আবারও শিক্ষাকার্যক্রম নিয়ে শিশুরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে অভিভাবকদের বক্তব্য হচ্ছে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের জীবনকে তো সংকটের মুখে ফেলা ঠিক হবে না। জনগণের ভালোমন্দ ভাবতে হবে। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভাবতে হবে। অবরোধের সময় যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে, তাই শিক্ষার্থীকে যানবাহনে তুলে দিয়ে সন্তান ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমে না। অভিভাবকরা বলেছেন যারা অবরোধ ডাকছে তাদেরও বিবেচনা করতে হবে। কেন না, অবরোধের ভোগান্তিটা মানুষের জীবনের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাই অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়ার আগে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাবতে হবে প্রেক্ষাপটটি কেমন। কেন না, আমাদের আগামী প্রজন্ম সুনাগরিক হয়ে না উঠলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত