ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপ

দেশের মানুষও চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন
যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে শর্তহীন সংলাপ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের গত সোমবারের এক বিবৃতিতে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর আনুকুল্য দেখায় না। উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি কার্যকর হবে। এর আগে বিকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় ৪০ মিনিটের এ বৈঠকে পিটার হাস মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র একটি চিঠি পৌঁছে দেন। চিঠির বিষয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, চিঠিটি খুবই সংক্ষিপ্ত, এতে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। একই চিঠি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এই তিনটি দলকে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর একটি চিঠি পেয়েছে বিএনপি। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, এ ধরনের কোনো চিঠি তারা গতকাল বিকেল পর্যন্ত পাননি। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এলেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের তৎপরতা বেড়ে যায়। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের জাতীয় নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বজন স্বীকৃত একটি প্রক্রিয়ার স্থায়ী রূপ দেয়া সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকার অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রহিত করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল তার বিরোধিতা করে আসছে। আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে- একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বর সব দেশে জাতীয় নির্বাচন ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হয়ে থাকে। কেন না, একটি নির্বাচিত সরকারই কেবল একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে। অতীতে বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারের ভূমিকা মানুষ স্মরণ করে ওই পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার ব্যাপারে আওয়ামীলীগ অবিচল রয়েছে। তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকায় বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সেটা নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসছে। বিএনপি নিজেদের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে না পেরে শুরু থেকে বিদেশি শক্তির ওপর নিভর করে আসছে। দেশের জনগণ মনে করে বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিএনপির অদৃশ্য হাত রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা সাজিয়ে এক ব্যক্তিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করার মধ্যদিয়ে বিএনপি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে। এছাড়া বিএনপি কারণে-অকারণে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করে। বিএনপির এই ধরনের মনমানসিকতার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করতে ওই তিন দলকে শতহীনভাবে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এদেশের মানুষ এই দেশের ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের বিষয়টি নির্ধারণ করবে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি কোনো শক্তি নয়। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের যে কোনো ক্ষেত্রে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কখনো কাম্য নয়। তবে দেশের কোনো একটি গোষ্ঠী যদি কথায় কথায় বিদেশি হস্তক্ষেপ কামনা করে, সেটা দুঃখজনক। পরিশেষে বলা যেতে পারে আমাদের দেশের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার বাইরে কোনো ধরনের অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পারিস্থিতি যাতে ঘোলাটে করতে না পারে, সেই পথ রুদ্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত