ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

‘ডায়াবেটিসে ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতা’

হাসান মাহমুদ শুভ
‘ডায়াবেটিসে ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতা’

‘ডায়াবেটিস’ শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। মূলত এটি একটি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। মোটকথা, আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমাদের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো, যে খাবার খাচ্ছি, সেটার অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি। ডায়াবেটিস মূলত দুই প্রকার- টাইপ-১ ডায়াবেটিস, টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে জন্মগত কারণেই ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না। অপরদিকে জন্ম-পরবর্তী কোনো স্বাস্থ্যগত অবস্থা, জীবনধারা অথবা খাদ্যাভ্যাসের কারণে দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি না হলে অথবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও সেটি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে সেটিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বলে থাকি। উভয় ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই যদি শরীরে ইনসুলিনের অভাব হয়, তাহলে শরীরে বাহির থেকে ইনসুলিন যোগান দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিয়মিত ইনসুলিন না নিলে জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। তারপর একটা পর্যায়ে গিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হতে পারে। কিটোঅ্যাসিডোসিস ডায়াবেটিস এর একটি জটিলতা। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নিতে হবে। এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিছু সংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় ইনসুলিন নিতে হয়। শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য ফিরে আসলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ : ১. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা। ২. দুর্বল লাগা, ঘোর ঘোর ভাব আসা। ৩. ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া। ৪. সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া। ৫. মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া। ৬. কোনো কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া। ৭. শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা। ৮. চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব। ৯. বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা। ১০. চোখে কম দেখতে শুরু করা।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে হৃদরোগ, কিডনি বৈকল্য, পক্ষাঘাত, চক্ষুরোগ, পায়ে পচনশীল ক্ষত, মাড়ির প্রদাহ, মূত্রাশয়ের রোগ প্রভৃতি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কাদের ডায়াবেটিস ঝুঁকি বেশি : যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। তাছাড়া যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া অলস ব্যক্তি, যারা কায়িক পরিশ্রম করে না তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

যেভাবে প্রতিরোধ করবেন : কথায় আছে রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। ডায়াবেটিস রোগ-প্রতিরোধ বলতে তিনটি ধাপে বা পর্যায়ে প্রতিরোধ করা বোঝায়। প্রথম ধাপটি হচ্ছে ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা। একে প্রাথমিক প্রতিরোধ বা প্রাইমারি প্রিভেনশন বলে। নিয়ন্ত্রিত এবং সুশৃংখল জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে খুব সহজেই একে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, কম চর্বি ও কম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান করা।

চিকিৎসা কি : রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিসের স্টেজ বুঝে চিকিৎসকরা চিকিৎসা প্রদান করবেন। নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়াবেটিসকে ভয় নয়, সচেতনতার মাধ্যমে জয় করা সম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত