পোশাক শিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ

আয়ের প্রবাহ অব্যাহত রাখতে দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানী ঢাকা, আশুলিয়া, গাজীপুর, সাভারসহ পোশাক শিল্প অধ্যুষিত সব এলাকায় আবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসেছে। সব পোশাক কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা তাদের প্রিয় কর্মস্থলে ফিরে উৎপাদান প্রক্রিয়ায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরে আসায় প্রশাসন ও রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ স্বস্তিবোধ করছেন। পোশাক শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনের মধ্যেকার উৎকণ্ঠা দূর হয়েছে। শ্রমিকরাও মাস শেষে বেতনের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন। সংসার পরিচালনার হিসাব-নিকাশ করবেন। মানুষ সংসার জীবন পরিচালনা করার জন্যই কর্ম করে। আর কর্ম থাকলে অর্থ আসবে। আর অর্থ আসলে সংসারও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করা সহজ হবে। বাংলদেশের রপ্তানি আয়ের অধিকাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এই পোশাক খাতের অস্থিরতায় সরকারের উৎকণ্ঠিত হওয়ায়ই স্বাভাবিক। বেশ কয়েকদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন করতে হিয়ে রক্তারক্তি ও ভাঙচুরের পাশাপাশি শ্রমিকরা কারখানা ছেড়ে রাস্তায় নামায় পোশাক কারখানার মালিক বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। পোশাক শ্রমিক নয়, এমন নামধারী শ্রমিক নেতাদের ডাকে পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে। ফলে উৎপাদনের চাকা বন্ধ হয়ে যায়।

আমাদের দেশের শ্রমিক আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য তাদের ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। এসব ট্রেড ইউনিয়নের লক্ষ্য শুধু শ্রমিকদের কল্যাণ নয়। তাদের মালিকের স্বার্থও দেখতে হবে। একটা কারখানা পরিচালনা করতে কি পরিমাণ অর্থের সংস্থান করতে হয়, সেটা মালিকপক্ষ ভালো জানেন। আবার শ্রমিকের ঘামের ফসল মালিক পক্ষ নিজের মনে করে একা ভোগ করবেন, সেটাও কাম্য নয়। মালিককের অর্থ ও মেধা আর শ্রমিকের শ্রম এই দুই মিলেই শিল্প। আর এই শিল্প পরিচালনা করার মধ্যদিয়ে যে অর্থ আসবে. সেটা দিয়ে সময় মতো শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক- কর্মচারীদের অধীনস্থ কর্মী হিসেবে না দেখে তাকে অংশীজন হিসেবে যেসব শিল্প-মালিক মনে করেন, তাদের কারখানায় কাজে পরিবেশ ভালো থাকে। আর কাজের পরিবেশ ভালো থাকলে উৎপাদান প্রক্রিয়াও গতিলাভ করে। বিগত কয়েকদিন পোশাক শিল্পে যা হয়ে গেল তা কারোই কাম্য ছিল না। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রবাহ অব্যহত রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্র শিল্প পুলিশ বেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। তারা শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

বর্তমানে পোশাক কারখানায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। একইসঙ্গে কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পোশাক শিল্পের বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ জানায়, পোশাক কারখানাগুলোতে এখন পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি সরকার পোশাক শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকার ন্যূনতম নতুন মজুরি ঘোষণা করে। শ্রমিকরা মজুরি আরো বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে আসছে। শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আশুলিয়া, মিরপুরসহ আরো কিছু জায়গায় একাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিজিএমইএ পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রদানে শিল্পাঞ্চলে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে জানমালের নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে কোনো শ্রমিক বা কর্মচারী এবং মালিক যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।