নির্বাচকালীন সরকারের পথচলা

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেই সুসংহত হবে গণতন্ত্র

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণ আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গত বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংঘাত ও সহিংসতা পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এই তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে সারা দেশে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে। এর আগে গত দুটি সংসদ নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। এরই মধ্যে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। তবে এখনো সবার অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিশতর্ভাবে আলোচনার টেবিলে বসে। সমঝোতাণ্ডসংলাপের মধ্যদিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে ২০২৪ সালের নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা পযালোচনা। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ভাষণেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উঠে এসেছে। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেছেন, নির্বাচন প্রশ্নে, বিশেষত নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্নে, দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত বিভাজন থাকতেই পারে। কিন্তু মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। নির্বাচনে সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে নির্বাচন কমিশন স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক আস্থা, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যকীয় নিয়ামক। তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগ মিছিল করেছে। আর তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর। তপশিলের প্রতিবাদে বিএনপির অবরোধ চলার মধ্যে গতকাল সারা দেশে আধাবেলা হরতাল ডাকে বাম গণতান্ত্রিক জোট। প্রায় ১৫ মিনিটের এ ভাষণে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সংসদ ও সরকার গঠনে নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট আপনার। ভোট প্রদানে কারও হস্তক্ষেপ বা প্ররোচনায় প্রভাবিত হবেন না। নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সরকার বারবার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। কমিশনও তার আয়ত্তে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে এবং সরকার থেকে আবশ্যক সব সহায়তা নিয়ে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। সিইস বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে কেবল সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়, নির্বাচন অধিক পরিশুদ্ধ ও অর্থবহ হয়। তাতে জনমতেরও শুদ্ধতর প্রতিফলন ঘটে। নির্বাচনের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, তারা দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা কামনা করছেন। সিইসি বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কমিশনের আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে। অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সম্প্রচার করে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার যেকোনো অপপ্রয়াস প্রতিহতের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। ভোট কারচুপি ঠেকাতেও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান সিইসি। তিনি বলেন, জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেকোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করতে হবে। নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব বর্তমান সরকারের ওপর পড়েছে। এই সরকার এখন নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে। বর্তমান সরকার রুটিং কাজ চালিয়ে যাবে। শুরু হয়ে গেল নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যকম। এই সরকার আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে যেমন নির্বাচন কমিশন সাফল্য অর্জন করবে, তেমনি নির্বাচনকালীন সরকারও জনগণের প্রশংসা অর্জন করবে।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেই সুসংহত হবে দশের গণতন্ত্র।