ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষক হোক শিক্ষার্থীবান্ধব

ইমন হাওলাদার
শিক্ষক হোক শিক্ষার্থীবান্ধব

প্রতিটি ছেলেমেয়ের কাছে মা-বাবার পরে সম্মানের স্থানে থাকেন শিক্ষক বা তার গুরুজন। একজন শিক্ষককে মা-বাবার সমতুল্য করে দেখা হয়। শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রতিটি ছেলেমেয়ের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় পরিবার থেকে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা নেওয়ার জন্য সবাইকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দারগ্রস্ত হতে হয়। যেখানে সবার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষিকা। তারা আমাদের শেখায় কীভাবে একজন প্রকৃত মনুষ্যত্ব সম্পূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়া যায়। আমাদের আচার-আচরণ কিরূপ হওয়া উচিত। বয়স ভেদে কাকে কীভাবে সম্মান, স্নেহ করা উচিত। মূলত জাতি গড়ার কারিগর তারাই। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব লোক নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের প্রধান কাজ হলো- শিক্ষার্থীদের মঙ্গলার্থে কাজ করা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায়, তার উল্টো চিত্র। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তৈরি করছে বাসা বাড়িতে, হলের ডাইনিং বন্ধ রেখে করছে মেয়ের গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের পানির লাইন কিংবা বিদ্যুৎ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। সুযোগ পেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে নিজের স্বার্থ হাসিলের কাজে। প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনজয় করে কীভাবে বেতনভাতা বৃদ্ধি করা যায়। শিক্ষার্থী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করার যেন সময়েই নেই তাদের কাছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন চাকরি নেয় বাধ্য হয়ে। জীবন পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন তাই।

শেখানোর নেশা যেন সবার মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। একজন দক্ষ শিষ্য গড়ে তোলার ইচ্ছাই যেন আর নেই। শিক্ষার্থীদের বিপদে একটা শিক্ষকের যেমন ঘুম হারাম হয়ে যেত আজ যেন তা কল্পনা শিক্ষক ছাত্রকে চিনে না, ছাত্র শিক্ষককে চিনে না। শিক্ষক ছাত্রের যে মধুর সম্পর্ক তা আজ বিলীন। স্কুল, কলেজ পর্যায়ের কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যেন খাতায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে দায় সেরেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কিছুই যেন করার নেই তাদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় কমিটি, প্রশাসনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। যাদের জন্য এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের যেন কোনো মূল্যই নেই কমিটি, প্রশাসনের কাছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া হলেও অর্থ আদায়ে একটুও দেরি করে না তারা। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান নিয়মকানুন অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত। প্রতিটি শিক্ষার্থী কী চায়? কোনো পদ্ধতি সংযোগ বা বিয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করবে এবং ভালো ফলাফল করবে, এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করার জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখতে পাই, যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও ক্লাসে শিক্ষার্থী সংকট। কেন এমন হয় একবার কী ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভেবে দেখেছেন? যদি আমি এ সম্পর্কে বলি, তাহলে আমার উত্তর হবে এমন, কেনই বা থাকবে। প্রতিটি মানুষ চায় নতুনত্বের সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করতে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসগুলো চলাকালীন অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা একাডেমিক পাঠ্যপুস্তক থেকে লাইন বাই লাইন রিডিং পড়ে যায়। যা খুবই বিরক্তিকর। ঢাকার শহরের মতো স্থানে জ্যাম ঠেলে এসে অর্থদণ্ড দিয়ে যদি সেই রিডিং বই পড়তে হয়। তবে তো বাসায় বসে সুস্বাদু খাবার খেয়ে একটা গভীর ঘুম দিয়ে উঠে এক টানা ২-৪ ঘণ্টা পড়াই উত্তম। কেন সময় অপচয় করে, বিরক্তিকর জ্যাম ভোগ করে, অর্থদণ্ড দিয়ে ক্লাস করা। তার থেকে বাসায় বসে সুন্দরভাবে পড়ালেখা চালিয়ে গিয়ে, পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিলেই হয়। পরীক্ষার হলে আবার স্যার ম্যামদের বাসাবাড়ির আলোচনা। কোন তরকারিতে লবণ কম হয়েছে। কার শাশুড়ি, ননদ ঝগড়াটে।

কার স্বামী কত বড় পোস্টে চাকরি করে। কোন সহকর্মীর ব্যবহার ভালো না। কার মেয়েকে কীভাবে স্কুলে দিয়ে আসা হলো। কার মেয়ে খাবার খেতে চায় না। কার আত্মীয় কোথায় কি করছে ইত্যাদি। যা সত্যি বলতে অসহ্য কর। মাঝেমধ্যে মনে হয়, তারা কি আদো কোনো সময়ে শিক্ষার্থী ছিল? শিক্ষার্থীদের ভালোলাগা, খারাপ লাগার বিষয়গুলো তারা বুঝতে পাড়ে না। পরীক্ষার হলে বসে উচ্চস্বরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিচ্ছা, কাহিনি, গল্প আর হাসাহাসিতে মেতে উঠে তারা। যা পরীক্ষার হলে থাকা প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য একটা বিরক্তিকর অধ্যায়। তাই পরিশেষে জোড় দিয়ে একটা কথা বলতে চাই, সুন্দর জাতি গঠনে শিক্ষকদের বিকল্প নেই। এর জন্য তাদের অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত