সড়কে মৃত্যুহার কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে একশ্রেণির পরিবহন চালক। তাদের বেপরোয়া আচরণ, যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত গতি, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতায় প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ আর বিনষ্ট হচ্ছে সম্পদ। একের পর এক সড়কে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এর প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। সড়কে অকাল মৃত্যুর কারণে শত শত পরিবারের স্বপ্নও ঝরে পড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় এ জাতীয় মৃত্যুতে জনমনেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ও সম্পদ বিনষ্ট হলেও চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। শাস্তি না হওয়া, আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে থাকা বা খালাস পেয়ে যাওয়ায় চালকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অধিকাংশ চালক লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও তা পেয়ে যাচ্ছে। হালকা যানবাহনের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাচ্ছে। গতিবেগ মেনে না চলা, ওভারটেক করা, কাজগপত্র বা চালকের অনিয়ম ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের হলেও তারা তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে না। দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলেও তারা যেকোনোভাবে ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে, এতে চালকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে, নিহত ও আহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার। এসব দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে দিনাতিপাত করছে অজস্র মানুষ। তারা পরিবারের উপর বর্ধিত বোঝা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক কথা হলো। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলো। এখনও হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সংগঠন নানা প্রকার খেদোক্তি উৎকীর্ণ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল-মিটিংও কম করেনি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনা স্বাভাবিক আর দুর্ঘটনা না ঘটাই যেন অস্বাভাবিক! দুর্ঘটনা নিয়ে পরিবেশিত খবরের মাধ্যমে আমরা এর খুঁটিনাটি অনেক কিছুই উপলব্ধি করেছি। কিন্তু যে কথাগুলো কম লেখাতেই উঠে এসেছে এবং যা বলা বা জানানো একান্তই প্রয়োজন তাহলো, এসব দুঃখজনক ঘটনার মূল কোথায়, তা খুঁজে বের করা জরুরি। এসব দুর্ঘটনার জন্য কাকে বা কাদের দায়ী করা উচিত তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা, কাদের নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ডে এবং দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতার কারণে এমন সব ঘটনা ঘটছে, তা বলা আবশ্যক। এ সবই ভাবনার বিষয়। দুর্ঘটনা আসলে অপরিণামদর্শী কর্মের ক্রম প্রক্রিয়ার প্রারম্ভিকতা থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে শেষ পরিণতি। সুতরাং বলা যায়, যদি উক্ত নির্দিষ্ট কাজের আরম্ভটা সঠিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে দক্ষ জনশক্তির হাতে শুরু হয়, তাহলে এ রকম বিয়োগান্তক ঘটনার কাছে আমাদের অনুভূতিকে জিম্মি হতে হয় না।