ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব গ্রহণ

মিলল সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সমর্থন
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব গ্রহণ

জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত রয়েছে রোহিঙ্গা প্রস্তাব। গত বুধবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। যৌথভাবে এ প্রস্তাবটি উত্থাপণ করে ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছিল রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে খুন ও ধর্ষণসহ নানারকম অত্যাচার চালায় মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। ২০১৭ সালে বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এরপর ৬ বছরের বেশি সময় ধরে তাদের মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বরাবরই সরব ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। তবে এবারই সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সমর্থন মিলল। ওআইসি ও ইইউয়ের এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১১৪টি দেশ। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের উদারতা ও মানবিক সহায়তার ভূয়সীপ্রশংসা করা হয়। মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে দেশটির সরকারকে রোহিঙ্গা সংকটের মূল খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিতের কথাও বলা হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবকেও স্বাগত জানানো হয়েছে। সেখানে মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছিল। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদের সদস্যদের মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতার অবসানের দাবি জানাতে বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, সব সদস্য দেশকে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং বাংলাদেশের ওপর আসা চাপকে ভাগ করে নিতে হবে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি ছোট আয়তনের জনবহুল দেশ। আমাদের সম্পদও কম। রোহিঙ্গাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেওয়া সুযোগ নেই আমাদের। তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি। বক্তব্যে তিনি আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এবারের রেজ্যুলেশনটিতে ১১৪টি দেশসহ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে যা এ যাবত সর্বোচ্চ। বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে এসেছে এই রেজ্যুলেশনে। এতে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের উদারতা এবং মানবিক সহায়তার ভূয়সীপ্রশংসা করা হয়েছে।

ভাসানচর প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে এতে। মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রেজ্যুলেশনে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো উদ্?ঘাটন করতে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশনে পরিষদের সদস্যরা মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতার অবিলম্বে অবসানের দাবি জানায়। এতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশনের তদন্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে রেজ্যুলেশনে।

সর্বোপরি ‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং’ নীতির আওতায় যাতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, এবারের রেজ্যুলেশনে সে বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ধরনের পদক্ষেপ আশার সঞ্চার করে। বাংলাদেশের প্রতাশা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা হয়তো আগামীদিনে তাদের মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একান্ত মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তবে তাদের উপস্থিতি আমাদের দেশের আর্থ- সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সহিংসতা ও মাদককারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সে কারণে রোহিঙ্গারা আজ বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের একার উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত