আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়

মো. আবদুল ওহাব

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আত্মহত্যা অর্থাৎ নিজের জীবন নিজে দেওয়াটা যদিও কষ্টসাধ্য, তবুও দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার সংখ্যা বাংলাদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ আত্মহত্যার মাত্রা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ থেকে ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার প্রতি লাখ মানুষে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৬ জন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। [তথ্যসূত্র : আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আজ, জাগো নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২] আত্মহত্যার বিশেষ কারণগুলো যদি বলতে চাই সেগুলো হলো বেকারত্ব, ব্যক্তিত্বের সমস্যা থাকা, মানসিক রোগ, প্রেম সম্পর্কিত জটিলতা ও আর্থিক অনটন ইত্যাদি। এ কারণগুলো যদি একটি সমস্যার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করি তাহলে এ সমস্যা নিয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে। ধরুন এ সমস্যা রোগে কেউ আক্রান্ত। হতে পারে এটা নিয়ে অনেক দিন ভাবনাচিন্তার পরও কোনো পথ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যাকে। আত্মহত্যাটাই কি তার সমস্যার সমাধান হতে পারে? আমি বিশ্বাস করি এ প্রশ্নটা যখন সেই সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তিটির মধ্যে আসবে যে ‘আসলেই কি তার আত্মহত্যা কোনো সমাধান বয়ে আনবে?’ তখন সে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারে না। কেননা দেখুন যখন তার মাথায় প্রশ্নটি আসবে যে যদিও সে সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যার পথকে বেছে নিচ্ছে, তবু তার আত্মহত্যার পর দুনিয়ার কোনো কাজ থেমে থাকবে না এবং সে যে সমস্যার জন্য আত্মহত্যাকে বরণ করে নিতে চাচ্ছে সে সমস্যারও সমাধান কখনোই ঘটবে না তার আত্মহত্যার ফলে। তখন সে আত্মহত্যা থেকে পিছিয়ে আসার জন্য একটু হলেও ভাববে।

প্রথমেই একটা বিষয় পরিষ্কার করা ভালো হবে, আর্থিক সংকট আত্মহত্যার আসল কারণ নয়। কেননা যদি আর্থিক সংকটই আসল কারণ হতো, তাহলে প্রাচীন যুগে বা যুদ্ধকালে অথবা দুর্ভিক্ষের সময়ে আত্মহত্যার চিত্র থাকত ব্যাপক বিস্তৃত। কিন্তু তা দেখতে পাওয়া যায় না। আবার এখন যেগুলো আত্মহত্যা ঘটছে, তাদের কারোরই আর্থিক সংকট নেই। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম/শহরে প্রতিবেশীদের, আত্মীয়দের নিন্দার ভয়েও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অনেকে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স হয়নি, পড়াশোনা শেষে চাকরি হচ্ছে না, এখন প্রতিবেশীরা, আত্মীয়রা পরিবারকে, আব্বু-আম্মুকে কী বলবে! আমি কীভাবে মুখ দেখাব? এমন চিন্তা করে আত্মহত্যাকে বরণ করছে। মানুষের নিন্দার ভয়ে আত্মহত্যা করলে আপনি যেমন নিজের কাছে হেরে গেলেন, তেমনই ওই নিন্দুকের কাছেও হেরে গেলেন। আর যদি এসব নিন্দাকে মোটিভেশন হিসেবে নিয়ে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারেন, তখন দেখবেন নিন্দুকই তার নিজের কাছে নিজেই হেরে যাবে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এটাকে হজম করে বহু মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এরূপ একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই, মিশু নামের একজন ছেলে মাদরাসায় পড়ত, সে তার মাদ্রাসায় ক্লাসের প্রথম ছাত্র ছিল।

কিন্তু সে কখনো কোনো বোর্ড পরীক্ষায় এ+ পায়নি। তার মেঘা নামের একজন ভগ্নী ছিল সে সব পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেত। মেঘার বাবা-মা মিশুর বাবা-মায়ের কাছে মিশুর উপস্থিতিতে বিভিন্ন কথা বলত, এতে মিশুর মা-বাবাও অনেক লজ্জিত হতো। এতে মিশু অনেক কষ্ট পেত। এইচএসসি পরীক্ষার পর, সেসব কষ্টকে সামনে রেখে সে অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নেয় এবং আল্লাহ তায়ালার রহমতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। কিন্তু অন্যদিকে মেঘা সব পরীক্ষায় গোল্ডেন পেলেও সে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি। দিনশেষে নিজে নিজেই মেঘার আব্বু-আম্মু মিশুর আব্বু-আম্মুর কাছে লজ্জিত। ঠিক এমনই বিষয়গুলো।

যদি মিশু হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিত বা আত্মহত্যা করত, তাহলে তার স্বপ্ন ও সমাধান থমকে যেত, কোনো কিছুই হতো না। এজন্যই বলছি, জীবনে হাজার হাজার সমস্যা থাকতেই পারে, তাই বলে এসব সমস্যার সমাধান কখনোই আত্মহত্যা হতে পারে না।

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়