ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহণ

পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি ভাড়া মিটাচ্ছে ব্যবসায়ীরা
হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহণ

আজ সকাল ৬টা থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত। এরআগে তারা পাঁচবারের মতো অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত জোট এখন কার বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে, তা স্পষ্ট নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করার পর এখন নির্বাচনকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন এই সকারের বিরুদ্ধে বিএনপি- জামায়াত জোটের দাবি কি তা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচন বন্ধ কিংবা নির্বাচন প্রতিহত করতে হলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত কি বিদ্যামান সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করছে? নাকি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। সেটা জাতিকে অবহিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। হরতালের মধ্যে এই পরীক্ষায় কীভাবে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে তা নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিতার শেষ নেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কে দেবে?

সেই প্রশ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের যেমন রয়েছে, তেমনি অভিভাবকেরও। হরতাল-অবরোধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। নৈরাজ্যকর এই পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী পরিবহন রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না। আগুন-সন্ত্রাসীরা সব সময় ওতপেতে থাকে পরিবহনে আগুন দেয়ার জন্য। যেসব ট্রাকের মালিক, চালক ও হেলপার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামেন, তারা স্বাভাবিক ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করছেন না। তারা জীবনের ঝুঁকির কথা মনে করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। ফলে ওই পণ্যের আনুপাতিক বাড়তি ভাড়া ধরে পণ্যের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেন ব্যবসায়ীরা। আর সেই ধাক্কা লাগে ক্রেতাদের ওপর। এমনি বাজারে প্রতিটি পণ্যে ঊর্ধ্বমূল্য। তার ওপর যদি পরিবহন ভাড়ার কারণে পণ্যে মূল্য বেড়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়। অবরোধের আগে এক ট্রাক সবজি বা অন্য খাদ্য পণ্য বাইরে থেকে ঢাকায় আনতে যেখানে খরচ হতো দূরত্ব ভেদে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন একই পণ্য একই স্থান থেকে ঢাকায় পরিবহনে খরচ গুনতে হচ্ছে ১৯ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারপরও সব ট্রাক ঢাকায় আসতে চায় না; অবরোধকারীদের অগ্নিসংযোগের আতঙ্কে থাকেন ট্রাকের চালক ও সহকারীরা। অবরোধের জ্বালাওপোড়াওয়ের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি কয়েক হাজার ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্যবোঝেই করে রাজধানীতে প্রবেশ করছে।

চালকরা বলছেন, অবরোধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালাতে হয়। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়, কখন কোন দিকে থেকে অবরোধকারীরা ট্রাকে হামলা করে। গ্লাসে একটি ঢিল মারলে যে ক্ষতি হবে, তা এক মাসের ভাড়া দিয়েও উঠবে না। আর আগুন দিলে পুরো ট্রাক শেষ, এমনকি জীবনও যেতে পারে। এই ঝুঁকি নিয়েই আসছি, ভাড়া তো একটু বেশি নেবই। অবরোধের কারণে ঢাকার বাইরে থেকে আসা পণ্যের খরচ বেড়ে গেছে। এর ফলে শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম কমার কথা ছিল অথচ যে হারে কমার কথা ছিল সে হারে কমছে না। বাড়তি পরিবহন ভাড়ার কারণে পণ্যের দামও বাড়ছে। তবে পণ্য পরিবহনে পুলিশ প্রহরা সাহস জোগাচ্ছে। মাঠ বা ছোট বাজার থেকে ট্রাকবোঝাই করে সড়কে উঠলেই দাঁড় করিয়ে পুলিশ অনেকগুলো ট্রাক এক সঙ্গে করে নিজ জেলা পার করে দিচ্ছে। পরের জেলায় ওই জেলার পুলিশ পাহারা দিয়ে পার করে দিচ্ছে। তবে কোন কোন এলাকা থেকে আসা ট্রাক পুলিশ প্রহরা ছাড়াই ঢাকা আসছে। কার্যত জীবন ও ট্রাকের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য আনা নেওয়া করতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া দেওয়ার পরও ব্যবসায়ী বা চালক-হেলপারের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই বলে আতঙ্ক বাড়ছে। নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ও তপশিল প্রত্যাখ্যান করে দেশজুড়ে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। হরতাল পালন হোক বা না হোক, এই হরতালের নামে অফিস-আদালতের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের চরাফেরাও ঝুঁকিপূণ্য হয়ে পড়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের পরদিন দলটি সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি দেয় তারা। এরপর শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধ পালন করে বিএনপি। তারপর ৭ নভেম্বর একদিনের বিরতি দিয়ে ৮ ও ৯ নভেম্বর অবরোধ দেওয়া হয়। পরে শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে আবার চতুর্থ দফায় অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর ১৫ ও ১৬ নভেম্বর পঞ্চম দফায় অবরোধ পালন করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত