বিশ্ব টয়লেট দিবসের আহ্বান

নিশ্চিত করা হোক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অন্যতম শর্ত স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট। সাধারণভাবে বলা যায়, টয়লেট মানেই জীবাণুর কারখানা। তাই টয়লেট পরিষ্কার রাখা এবং পরিচ্ছন্নভাবে ব্যবহার করা খুবই জরুরি। কারণ, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট থেকে হতে পারে নানান ধরনের রোগ। এসব রোগ প্রতিরোধে শুধু বাসায়ই নয়, হাসপাতালসহ সব পাবলিক প্লেসের টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ মানুষ নানান রোগ-শোক নিয়ে হাসপাতালে যায়। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোর শৌচাগারের বেহাল দশা। রাজধানীর বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত টয়লেট, নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এর ফলে অনেকে জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে গেলেও টয়লেট ব্যবহারে পড়েন বিড়ম্বনায়। পুরুষের চেয়ে নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশের টয়লেটের কারণে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন নারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল পালিত হলবিশ্ব টয়লেট দিবস। শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘দ্রুত পরিবর্তন’।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তথ্যমতে, প্রতিবছর অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারে দেশের দুই কোটি শিশু টাইফয়েড, জন্ডিস, কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও অপর্যাপ্ত টয়লেটের কারণে প্রস্রাব চেপে রাখায় মূত্রনালিতে সংক্রমণ ঘটছে। বিশেষ করে নারীরা ঘরের বাইরে গিয়ে পরিবেশ না পেয়ে জরুরি প্রয়োজনেও টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন না। আবার পিরিয়ডকালীন প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার না করলে মূত্রনালির পাশাপাশি জরায়ুতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ফলে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন জরায়ুর সংক্রমণে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন সবমিলিয়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার রোগী ও স্বজনরা এসে থাকেন। তাদের বড় অংশ নারী। তবে এই বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য টয়লেট আছে ৪১টি। এগুলোর মধ্যে আবার ১০টি তালাবদ্ধ ও ১৪টি ব্যবহার অনুপোযোগী। ফলে ব্যবহার উপযোগী আছে মাত্র ১৭টি টয়লেট। তবে টয়লেটের সঙ্গে হাত ধোয়ার বেসিন বা জায়গা আছে মাত্র দুইটি হাসপাতালে। অসংখ্য মানুষ ব্যবহার করার কারণে এসব টয়লেট প্রতি ঘণ্টায় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষ্কার না করায় সেগুলো হয়ে পড়ে নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী। ছেলেদের জন্য সমস্যা একটু কম হলেও মেয়েদের জন্য এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। টয়লেটের অপ্রতুলতা ও অপরিচ্ছন্নতায় হাসপাতালে আসা রোগীদের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমাদের হাসপাতালগুলোতে থাকা টয়লেট নারীদের জন্য উপযোগী নয়। এতে দেখা যায়, টয়লেটের সুবিধা না থাকায় তারা হাসপাতালে এসে পানি পান করেন না বা কমিয়ে দেন। কিংবা অনেক সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখেন। এতে কিডনির সমস্যা হচ্ছে। মূত্রথলির পাশাপাশি জরায়ুর ইনফেশন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাদের অভিমত ‘অবশ্যই রোগী অনুপাতে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত টয়লেট থাকা জরুরি। অন্যথায় চিকিৎসার জন্য এসে উল্টো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হবে হাসপাতাল।’

ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর আরবান পুওরের (ডব্লিউএসইউপি) ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় জনসংখ্যার মাত্র ৫৮ শতাংশ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পান। বাকি ৪২ শতাংশ মানুষ প্রাথমিকভাবে বাজার এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেসে থাকা অপর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ওপর নির্ভর করেন। এতে আরো জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০০টি পাবলিক টয়লেট আছে। সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ এসব টয়লেট ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন দোকানি, শ্রমিক, ভাসমান বিক্রেতা এবং গাড়ির চালক। ঢাকায় সাধারণ মানুষের জন্য পাবলিক টয়লেটের প্রকল্প নিয়ে কাজ করে ভূমিজ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। ব্যবহারযোগ্য পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। খারাপভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা পাবলিক টয়লেটগুলো প্রায়শই ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সঠিক অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার অভাব শুধু অপরিচ্ছন্নতা বাড়ায় না, বরং দুর্গন্ধের জন্যও দায়ী। আর এসব সঙ্গত কারণে আমাদের সবারই দাবি থাকবে- নিশ্চিত করা হোক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা।