ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নৈরাজ্যে কর্মসংস্থানে ধস

সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে
নৈরাজ্যে কর্মসংস্থানে ধস

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে মাঠে রয়েছে বিএনপির নেতৃতাধীন কয়েকটি বিরোধী দল। আজ সকাল ৬টার শেষ দফার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শেষ হয়ে গেলেও দুই-একদিন বিরতি দিয়ে আবার হয়তো অবরোধ কিংবা হরতাল কর্মসূচি আসবে। তবে হরতাল-আবরোধের দিন আর অন্য স্বাভাবিক দিনের মধ্যে পার্থক্য দিন দিন কমে এলেও মানুষের আতঙ্ক কমেনি। মানুষ তার নিত্যদিনের প্রয়োজনে জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে, ঘর থেকে বের হচ্ছে। তবে সবাই আগুন সন্ত্রাসের ভয়ে থাকেন। এই আগুন সন্ত্রাস প্রতিহত কিংবা আগুন সন্ত্রাসের উৎস নির্মূল করতে পারলে মানুষ সাহস করে যানাবহন নিয়ে রাস্তায় নামতে পারত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারলে হয়তো অবরোধ ও হারতাল আহ্বানকারীও পিছু হটে যেত। মানুষ রাস্তাঘাটে অবাধে যাতায়াত করতে পারত। তবে তা হচ্ছে না। এতো সতর্কতার মধ্যেও বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। বিএনপির নেতৃত্বে হরতাল-অবরোধ হবে এবং তারা আগামী দ্বাদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নসাৎ করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাসের পথ বেছে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে জনগণের নিরাপত্তা দেবে কে, সেটাই সবার প্রশ্ন। মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। কখন যে কি হয়ে যায়, সেটাই সবার চিন্তার বিষয়। রাজনৈতিক এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশের সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা জমানো সঞ্চয় থেকে সংসার চালাচ্ছে।

হরতাল-অবরোধে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও আজ হুমকির মুখে। মানুষের গতিবিধি সীমিত হওয়ার কারণে বেচাকেনাও কমে গেছে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষত, রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল, অবরোধ আর সহিংস কর্মকাণ্ডে দেশের আবাসিক হোটেলগুলোর ব্যবসায় এখন চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় কমছে পর্যটকের সংখ্যা। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েক সপ্তাহ ধরে যে উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করছে তারই প্রভাব পড়েছে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়। ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে বুকিং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এতে ভরা মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এখন পর্যটনের মৌসুম। আবার বছরের শেষভাগে নানা সামাজিক ও করপোরেট অনুষ্ঠানের সময়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটনের এই মৌসুমেও দেশের আবাসিক হোটেলগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম। রাজনৈতিক অঙ্গনের চলমান পরিস্থিতিতে হোটেল মালিকরা যেমন লোকসানে পড়বেন, পাশাপাশি এ খাতের কর্মচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ব্যবসায় ধস নামায় অনেক হোটেল মালিক বাধ্য হয়ে কর্মচারীদের ছুটি দিচ্ছেন। অনেকে ঠিকমতো বেতন দিতে পারছেন না।

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় হোটেল ব্যবসার ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময় গড়ে অন্তত ৯০ শতাংশ রুম বুকিং থাকে। হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবার তা দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। বেশ কিছু হোটেলে দুই-একদিন পর পর পুলিশ আসছে। কড়াকড়ি আগের থেকে বেড়েছে। ফলে অনেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে হোটেলে আসছেন না। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত সহিংস ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে মানুষ উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মানুষ এখন ঢাকায় এসে কী করবে। কোথাও কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় হোটেল ব্যবসায় মন্দা সময় চলছে দেশের প্রধানতম পর্যটন শহর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটেও। একই অবস্থা কুয়াকাটায়ও। সেখানকার হোটেল কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তাদের হোটেল ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে কুয়াকাটার বেশিরভাগ হোটেলের রুম এখন অতিথিশূন্য। দূরপাল্লার গণপরিবহন চলছে না। ফলে মানুষ এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছে না। এ কারণে হোটেলগুলোতেও পর্যটক-অতিথির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক হোটেলে বুকিং বাতিল করা হচ্ছে। হরতাল-অবরোধে পরিবার-পরিজন নিয়ে কেউই ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ করতে চায় না। হোটেল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনের চলমান পরিস্থিতিতে হোটেল মালিকরা যেমন লোকসানে পড়বেন, পাশাপাশি এ খাতের কর্মচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শুধু হোটেল ব্যবসায়ীরাই নয়, অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। আগামী দিনে আয়-রুজির সুযোগ আরো কমে গেলে সাধারণ মানুষ কীভাবে সংসার পরিচালনা করবে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। সাধারণ মানুষ চায় পরিশ্রম করে সংসার চালাতে। আর সংসার চালানোর পথ যদি বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি জনগণের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে এই নির্বাচনব্যবস্থা গুরুত্বহীন হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত