ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রলয় গ্যাং

পবিত্র শিক্ষাঙ্গন হোক নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রলয় গ্যাং

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত অপরাধী চক্র ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিভিন্ন ‘অসামাজিক’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এই গ্যাংয়ের ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের এক সভায় ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর করে নতুন করে আলোচনায় আসে ‘প্রলয় গ্যাং’। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়। এর আগেও নানা অপকর্মের কারণে সমালোচিত হয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একদল শিক্ষার্থীর এই অপরাধী চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একজন ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগে চারজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, এই বিষয়ে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সাময়িকভাবে বহিষ্কৃতরা হলেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের তবারক মিয়া, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের মুরসালিন ফাইয়াজ ও ফয়সাল আহমেদ ওরফে সাকিব এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কথিত ‘প্রলয় গ্যাং’ নামের একটি গ্রুপের বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গঠিত আন্তহল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৪৯ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনজন। তারা চলতি বছরসহ আগামী তিন বছরের জন্য বহিষ্কৃত থাকবেন। চলতি বছরের পরীক্ষা এবং দুই বছরের জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন না আরো ১৬ জন। এছাড়া চলতি বছরের পরীক্ষা এবং আগামী ১ বছর পরীক্ষা দিতে পারবেন না আরো ২৮ জন। বাকি দুজন এ বছর মিডটার্ম অথবা ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ওতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ও সুনাম সবচেয়ে বেশি। এইবিশ্ববিদ্যায় দেশের রাজনীতির সূতিকাগার। বাংলাদেশের অনেক স্বাধিকার আন্দোলন এই বিদ্যাপীঠ থেকে গড়ে উঠেছে। শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য, নাটকসহ বিভন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সবর থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক, ছাত্র, কমকর্তা ও কর্মচারী জীবন দিয়েছেন। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গৌরবজনক ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আলোকিত সন্তান রয়েছে। তাদের সেই আলো ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো দিক রয়েছে যেগুলো ওইসব আলোকিত অধ্যায়কে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করে। সে রকম একটি কালো অধ্যায় হচ্ছে প্রলয় গ্যাংয়ের অত্যাচার। পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে গ্যাং অত্যাচারে শিক্ষার্থী কিংবা সামজের যে কোনো শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা তো কল্পনা করাও যায় না। শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করার পর যে কোনো মানুষের মধ্যে একটা অন্যরকম শিহরণ জাগ্রত হয়। কেননা শিক্ষাঙ্গন থেকে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয় অথচ সেখান থেকে শিক্ষাথীরা কেন অপরাধী হয়ে বের হবে সেটা কোনো অবস্থায় কাম্য নয়। সাধারণ মানুষ তার সন্তানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠান একজন মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য আর সে যদি সেখান থেকে অপরাধী হয়ে বের হয় তাহলে তার চেয়ে বেশি কষ্ট আর থাকতে পারে না। সন্তান লোখাপড়া শিখে বড় হবে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেটাই তো সবার কাম্য। যে সব শিক্ষাথীকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বাকি জীবন কীভাবে কাটবে, তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি হবে কি না, সেই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অপরাধী চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে কি এর আগে কোনো গোয়েন্দা প্রতিবেদন পায়নি। দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে নিজস্ব আঙ্গিকে একটা গোয়েন্দা বিভাগ থাকা দরকার। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী কোনো ধরনের অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত কি না সেটি গোয়েন্দা বিভাগ খুঁজে বের করবে। যাথাযথ কর্তপক্ষকে তারা অপরাধী চক্রের গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করবে। শান্তিপূর্ণ শিক্ষাঙ্গনের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো দরকার। অন্যথায় অপরাধের প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের অপরাধের খবর যখন গণমাধ্যমে আসে তখন ওই শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই সবারই কামনা হওয়া উচত একটি নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত ক্যাম্পাস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত