বিচারপতির বাসভবনের নিরাপত্তা

পরিহার করতে হবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিদের বাসভবনের চারপাশের সড়কে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমানের স্বাক্ষর করা চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত জাজেস কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী, সুপ্রিমকোর্টসহ প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের বাসভবন এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে চিঠিতে অন্য যেসব নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে, আমরা সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমনিতেই প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে কাকরাইল ও মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত, মগবাজার মোড় থেকে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত, কাকরাইল মোড় থেকে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত এলাকাকে বিশেষ নিরাপত্তা এলাকা গণ্য করে এসব এলাকার ভেতরে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল আয়োজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে ডিএমপিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারপতি ভবন ও বিচারপতি কমপ্লেক্স এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।’ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ছুটির দিন ব্যতীত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাইক ব্যবহার করে কোনও সভা-সমাবেশ করা যাবে না।’ ডিএমপি কমিশনারকে লেখা এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও বিচারপতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বিজয়-৭১’ ভবনে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি, পুলিশ চেকপোস্টের নিরাপত্তাজনিত কার্যাবলির জন্য একটি টেবিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বিচারপতিদের যাতায়াতের পথে পুলিশের টহল ও তৎপরতা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্টের প্রবেশ ও বের হওয়ার গেটগুলো এবং সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারপতি ভবন ও বিচারপতি কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকাকে সিকিউরিটি জোন হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিদের বাসভবন এলাকায় পর্যাপ্ত ও শক্তিশালী সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলসহ দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও বিচারপতি কমপ্লেক্সে গাড়ি গমনাগমনের তথ্যাবলি নির্দিষ্ট রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। চিঠিতে আরো উল্লেখ আছে, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উভয় বিভাগের বিচারপতিদের গানম্যানদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং প্রদান করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনারকে (প্রটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল) নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুপ্রিমকোর্টের নিরাপত্তা প্রহরীরা কর্তব্যরত অবস্থায় সার্বক্ষণিক নির্ধারিত পোশাক ব্যবহার করবে বলে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবন লক্ষ্য করে যে হামলা চালানো হয় সেই প্রেক্ষাপটে এই ধরণের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত সমযোপযোগী হয়েছে। আদালত একটি স্পর্শকাতর অঙ্গন। সেখানে বিচারকরা দেশের প্রচলিত আইন-কানুন, সাক্ষ্যদান, পুলিশের প্রতিবেদন এবং বাদী- বিবাদীর নিয়োজিত আইনজীবীদের বক্তব্য আমলে নিয়েই মামলা পরিচালনা করেন। আইনের ভাষায় যিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন বিচারক সে অনুসারে রায় দেন। এখানে আবেগ, বিরাগ কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করে না। একজন বিচারক আইন ও বিবেকের সঙ্গে কোনো আপস করেন না। তবে বিচারকের রায়ে কোনো পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ এবং আর কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হতে পারে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ উচ্চতর আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। তবে বিএনপি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়েছে আদালতের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা নেই। কিন্তু কোনো সভ্য দেশের ক্ষেত্রে এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। কোনো নিরাপরাধী ব্যক্তি যাতে শাস্তি না পায় সেজন্য একজন বিচারক মামলার প্রতিটি পর্যায় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে থাকেন। বিচারপতিদের বাসভবন লক্ষ্য করে হামলা পক্ষান্তরে আদালত অঙ্গনের ওপর হামলার সামিল। প্রধান বিচারপতির বাসভবন লক্ষ্য করে কোনো প্রকার হামলা চালানো হলে তাদের পরিবারের সদস্যরাও স্বাভাবিক কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আদালত অঙ্গন হোক কিংবা প্রধান বিচারপতির বাসভবন এলাকা হোক কোথাও কোনো প্রকার অনাচার সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। সে কারণে দেশের মানুষের প্রত্যাশা থাকবে সংক্ষুব্ধ পক্ষের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা আগামী দিনে আদালত প্রাঙ্গণ ও বিচারপতিদের বাসভবন এলাকায় কোনো প্রকার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না।