ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অবরোধে বিসিএস পরীক্ষা স্থগিত

ছুটির দিনে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে
অবরোধে বিসিএস পরীক্ষা স্থগিত

আজ সকাল ৬টা থেকে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপির নেতৃত্বে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আবার হয়তো হরতাল ডাকা হবে। অবরোধ-হরতালে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে কতটুকু প্রভাব পড়ে, সেই বিচার বিশ্লেষণ করার চেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে পরীক্ষা ব্যবস্থা। বিএনপির নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দল, একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে- আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের সময়টিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া তারা হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে। হরতাল-অবেরোধ কর্মসূচি পালন হলো কি, হলো না, সেটা তেমন একটা গুরুত্ব বহন করে না। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির দিনগুলোর সঙ্গে অন্য স্বাভাবিক দিনগুলোর মধ্যে কার্যত কোনো পাথর্ক্য নেই। তারপরও ভয়, কখন কি হয়ে যায়। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। টানা এক সপ্তাহ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ও পরীক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর অবশেষে স্থগিত করা হলো এই পরীক্ষা। হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তা শঙ্কা মাথায় নিয়ে পরীক্ষায় বসতে চাননি প্রার্থীরা। অন্যদিকে পরীক্ষা নিতে প্রথম দিকে অনড় ছিল পিএসসি। সময়সূচি ও আসনবিন্যাসও প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে অবশেষে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল। গত শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাসের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠেয় ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা (আবশ্যিক ও পদ-সংশ্লিষ্ট) অনিবার্য কারণবশত কমিশন স্থগিত করেছে। পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ও সময়সূচি যথাসময়ে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

জানা গেছে, হরতাল-অবরোধ ও নির্বাচনি তৎপরতার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিলেন পরীক্ষার্থীরা। গত ১৯ নভেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে স্মারকলিপি দেন। একই দাবিতে পিএসসিতেও লিখিত আবেদন করেন তারা। এরপর তারা আবারও সিইসিকে লিখিত আবেদন দেন। পরীক্ষা স্থগিত করায় খুশি প্রার্থীরা। তারা পিএসসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া মেয়েদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা জানানোর পর পিএসসি নমনীয় হয় এবং পরীক্ষা স্থগিত করে। গত ৬ জুন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ১২ হাজার ৭৮৯ জন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হন। এ বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জনকে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন। তবে শুধু ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। এরই মধ্যে আরো কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।

এভাবে কত দিন হরতাল-অবরোধ চলবে, আর কত পরীক্ষা স্থগিত করা হবে, সেই দুশ্চিন্তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু কার্যদিবসের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়, সে কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। গত শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরীক্ষা নিলে পরীক্ষার্থীরা কোনো প্রকার উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা ছাড়া যেমন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন, তেমনি কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকেবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগলেও এই পন্থা অবলম্বন করা যায় কি না, সেটি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরে বার্ষিক পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠিয়ে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকেন। আবার শিক্ষার্থীদের মনের ভেতরও একটা আতঙ্ক কাজ করে। আতঙ্ক নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের চিন্তা কম নয়। তাই বিকল্প পন্থা হিসেবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অভিভাবকদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কমবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত