স্মার্ট বাংলাদেশে নতুন কারিকুলাম ও আমাদের প্রত্যাশা

ড. সৈয়দ নাজমুল হুদা

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন আমার মেঝ খালা বলত, লেখাপড়া শিখে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। লেখাপড়া শিখি আমরা চাকরির জন্য। গাড়ি বাড়ির জন্য। শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়াটা চাকরিনির্ভর হয়েছে। মানবিক, মনুষ্যত্ববোধ আর দেশাত্মবোধের সঠিক জন্ম দিতে না পারলে শিক্ষাব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়বে। ক্লাসের শিক্ষা বোঝার পর থেকেই দেখে আসছি, একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া, মুখস্থ ও পরীক্ষা এভাবেই করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে চলেছে, এইভাবে শিক্ষাব্যবস্থা। একজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অভিভাবক সবাই এই ধারায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিক্ষাতে অভ্যস্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন করে চালু হওয়া শিক্ষাক্রমে আর থাকবে না, মুখস্থনির্ভরতা লেখাপড়া। মুখস্থ করার পরিবর্তে নিজ দক্ষতা ও কাজের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রী আত্মস্থ করবে জ্ঞান। এতে করে পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থাও বদলে যাবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, এতে করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাতে আমূল পরিবর্তন আসবে। নতুন একটি ব্যবস্থা চালু হলে সেই ব্যবস্থার আশানুরূপ ফল পতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রেও বিদ্যমান কারিকুলামের পরিবর্তে নতুন, কারিকুলামের দৃশ্যমান ফল পেতে আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপরেও যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নতুন কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে, সেটি আশানুরূপ ফল পেলে শিক্ষাপদ্ধতি সার্থক হবে। কতটুকু আশানুরূপ ফল হবে সেটিই দেখার বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গতানুগতিক পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে একাধিক অভিভাবক-উৎকণ্ঠায় থাকলেও এক সময় এটি সহনশীল ও গ্রহণযোগ্য হবে সবার কাছে এ পদ্ধতি। শিক্ষার্থীর একাডেমিক বিষয়ে প্রকৃত মূল্যায়নকারী শিক্ষার্থীর শিক্ষকরা। সুতরাং শিক্ষকের হাতে মূল্যায়ন পদ্ধতি এটি যথাপযুক্ত এবং সঠিক।

এই শিক্ষাক্রম সবটাই আউটকাম বেজড। শিক্ষার্থীরা তার নির্দিষ্ট টপিকস সম্পর্কে আগে চিন্তা করবে। তারপর কাজ করবে। প্রথমে বুঝবে। সেটা শিখবে। পরে বাস্তবায়ন করবে। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের কারিকুলাম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু যোগাযোগ কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত নয়। এই উন্নয়নে তার শিক্ষা পদ্ধতির একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এ কারণে আমাদের কারিকুলাম উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করার কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি সফলভাবে কাজটি করছেন। এটি একটি সময় উপযোগী মাইলফলক সিদ্ধান্ত। এ পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো শিক্ষক চাইলেও নম্বর দিয়ে অবমূল্যায়ন কিংবা অতিমূল্যায়িত করতে পারবেন না। করলেও সেটা হবে নীতিভ্রষ্ট কাজ। পরীক্ষাপদ্ধতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সবার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দিনই শিক্ষার্থীর জন্য একেকটি পরীক্ষা হিসেবেই কাজ করতে হবে। মেধার বিকাশ ও সৃজনশীলতা সৃষ্টিতে এটি একটি অন্যতম যুগোপযোগী কারিকুলাম। শিক্ষার্থীর মনে সৃজনশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা হয়েছে ২০০৮ সালে দেশের মাধ্যমিক স্তরে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার বিষয়টি মূল্যায়ন ও বিবেচনা করা হয়। সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতির বিষয়টিকে শুধু মাধ্যমিক স্তরে না রেখে পরবর্তীতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দু-একটি বিষয় ছাড়া অধিকাংশ বিষয় এ পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। ধীরে ধীরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পদ্ধতির সঙ্গেও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এবং উঠবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা মুখস্থবিদ্যা, গাইড, নোট বই, প্রাইভেট টিউটর, কোচিং এর সঙ্গে অতিপরিচিত। সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর মনের বিকাশ, তার বুদ্ধি, চিন্তার প্রখরতা বাড়ানোর জন্যই এই পদ্ধতি। সৃজনশীল পদ্ধতি একজন শিক্ষার্থীর মুখস্থবিদ্যা পরিহার, গাইড বই ও কোচিংনির্ভরতা কমানোর একটি অন্যতম ব্যবস্থা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এ পদ্ধতি চালু হওয়ার পরেও আমাদের দেশের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সনাতন পদ্ধতির দিকেই বেশি আগ্রহী। শিক্ষার্থীরা কোচিংনির্ভরতা, প্রাইভেট পড়তে তারা যেমন আগ্রহী তেমনি অভিভাবকরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। রেজাল্টনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও এ কারণে নতুন কারিকুলাম নিয়েও একই সংশয় অভিভাবকদের মধ্যে দানা বেঁধেছে। পাশাপাশি একটি অপপ্রচারকারী মহল সব সময় ভালো কাজ হোক অথবা যেকোনো যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কিছু বলার প্রয়াস নিয়েই কথা বলতে পছন্দ করেন। বিরোধিতার তাগিদেই বিরোধিতা। তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কিছু তো বলতে পেরেছি। সেটা ভালো হোক কিংবা মন্দই হোক। আমাদের এ ধরনের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে পড়ানোর ধরন, মূল্যায়ন ও পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে এবং আসবে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু হবে। এই একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থায় থাকবে না নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের বিভাজন। এই কারিকুলামে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি পড়ানো হবে। শিক্ষা মানুষের সুপ্ত চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়। মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই একটি জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের সহায়তা করে না।

আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়বে, সেটি নির্ধারিত হতো নবম শ্রেণিতে বোর্ড রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে বিভাগ বিভাজন হবে, উচ্চ মাধ্যমিকে। নতুন এই কারিকুলামের মাধ্যমে ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই কারিকুলামমে প্রথাগত পরীক্ষা কমে যাবে। জিপিএর পরিবর্তে ফলাফল নির্ধারিত হবে। তিনটি ভাগে এই ফলাফল নির্ধারিত হবে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুটি পরীক্ষা হবে। নতুন এই কারিকুলামে প্রায় সব শ্রেণিতেই বড় অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীনের ভিত্তিতে। এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসিকতা এবং সুপ্ত জ্ঞান বিকাশে সহায়ক হবে।

রীক্ষা হবে না জেনে অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক এর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটা নিয়ে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। নতুন কারিকুলামে যেভাবে পড়ালেখা হবে, সেখানে অভিভাবকরা মনে করছেন শিক্ষার্থীরা তেমন লেখাপড়া করতে হবে না। বিষয়টি কিন্তু সেটা নয়। বরঞ্চ তাদের বুদ্ধিবৃত্তি আর চিন্তার প্রখরতায় বেশি পড়াশোনা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেভাবে শিখছে বাসায় এসে অথবা স্কুলে। যেভাবে হাতে কলমে কাজ করছে সেটা দেখে অভিভাবকরা মনে করছেন বাচ্চারা যেটা করছে তা কিছুই না। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষিত এবং যথাপোযুক্ত না হলে কারিকুলামের সঠিক সফলতা পেতে আরো দেরি হবে। শিক্ষার্থীদের যেসব কাজ দেওয়া হবে ক্লাসে, শিক্ষক সেগুলো দলগতভাবে অথবা এককভাবেই ক্লাসে শিখিয়ে দেবেন। এখানেও থাকবে প্রশ্ন পদ্ধতি। থাকবে মূল্যায়ন পদ্ধতি তবে থাকবে না কোচিংয়ে কিংবা টিউটরের কাছে যেয়ে পড়াশোনার তেমন কোনো চাপ। শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি, কর্মপরিকল্পনা শক্তি প্রখর হবে। শিক্ষার্থীর পড়াশোনা স্কুলেই শেষ হয়ে যাবে। পড়াশোনা হবে আনন্দনির্ভর। অনেকে বলছে বাসায় গিয়ে হোমওয়ার্ক করতে হবে না। এটা সঠিক নয়। যে বিষয়টি সে ক্লাসের মধ্যে শিখছে অথবা ক্লাসে আলোচনা হয়েছে, সে কাজটি সে বাসায় গিয়েও করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ কমানো এই পদ্ধতির অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্য।

আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের যে ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি আর চিন্তায় আমরা সৃষ্টি করে দিব, তারা সেটাতেই অভ্যস্ত হবে। তারা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এগিয়ে নিবে। আশা করা যায়, শিক্ষকদের প্রকৃতভাবে এই পদ্ধতি সম্পর্কে ট্রেন আপ করে দিতে পারলে কারিকুলামের সফলতা আসবে। নৈতিকভাবে শিক্ষার্থী গড়ে উঠবে। শিক্ষক কোচিং, প্রাইভেট টিউটর না করিয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসেই তৈরি করে দিবে তার পড়াশোনা। এটা হবে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে একটি উন্নত বন্ডিং।

নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে করে যেমন শিক্ষকের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে, তেমনি শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধার জায়গাটি বেড়ে যাবে। এই অবাধ স্বাধীনতার শিকার যেন শিক্ষার্থীকে হতে না হয়, সেই বিষয়টি ও লক্ষ্য রাখতে হবে।

আমাদের দেশে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় শিক্ষকরা অনেক সময় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেন। বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। সব শিক্ষকই এটা করেন, আমি সেটা বলব না। এক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এ বিষয়টি কীভাবে রোধ করা যায় তার একটি পদ্ধতি হলো, আমি মনে করি নৈতিকতা। নৈতিকভাবে শিক্ষক তার কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সঠিক মূল্যায়ন করবেন। আমাদের শিক্ষকরা নৈতিকভাবে সৎ। তাই আমরা এই কারিকুলাম সফলতা অর্জন করব। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এটা থাকবে। সেটাও এক সময় কমে আসবে। সমাজকে বদলাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থায় যাওয়ার কোনো বিকল্প আমাদের নেই।

এই কারিকুলাম নিয়ে একটি অপপ্রচার চলছে। কারিকুলাম সম্পর্কে ভুল বোঝানো হচ্ছে। সঠিক বিষয়টি জাতির সামনে উপস্থাপিত করতে হবে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের সঠিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে যে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এ কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। এই শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষকদের ক্ষমতা ও সম্মান ধরে রাখা শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের ওপরেই নির্ভর করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেমন নরওয়ে, ডেনমার্ক, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষার্থীর শিখনকালে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে তার শিক্ষকরা। শিক্ষকরা এই মূল্যায়ন নির্ভুলভাবে করে আসছে।

আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের নম্বর প্রদানে যে অভিযোগ তা খুব বেশি নয়। ব্যবহারিক বিষয়ে অনেক সময় অনেক কথা শোনা যায়। নতুন শিক্ষাক্রমে এমন কাজ করলে তা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা আছে। শিক্ষাবিদ এবং নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন এই সমস্যা তেমন কোনো সমস্যা নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলন সংগ্রামে শিক্ষকরা তাদের গুরুত্ব ও জাতির প্রতি তাদের দায়িত্ব প্রমাণিত। এক্ষেত্রেও শিক্ষকরা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালনে সফল হবে। একজন শিক্ষক শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষক নয়। তিনি একজন জাতিরও শিক্ষক বটে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন কারিকুলামে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার মতো শিক্ষা ব্যবস্থায় সফল হবে।

বাজারে বিদ্যমান নোট, গাইড এসেও থাকে তা থেকে এই পদ্ধতিতে তেমন কোনো ক্ষতি নেই। এগুলো শিক্ষার্থীর সহায়ক বই হিসেবে কাজে আসবে। এ কারণে এটি নতুন কারিকুলামে নোট, গাইড বই তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। এই কারিকুলাম প্রক্রিয়ায় এমন কিছু মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যদি শিক্ষকরা তা লঙ্ঘন করেন তা বোঝা কঠিন কিছু হবে না। অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন করা হলে শিক্ষকদের জবাবদিহিতার মধ্যেও আনা হবে। ডিজিটালি শিক্ষার্থীর সব কিছু রেকর্ডেড রাখা হবে।

এই কারিকুলামে একটি ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ফল তৈরি হবে। কেউ চাইলেও আর স্পেশাল কোনো ব্যক্তির ছেলেমেয়েকে প্রথম করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি। জেলায় জেলায় গড়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। প্রতিকূলতা ছিল, আছে এবং থাকবে।