ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংস্কৃতির শেকড়

মো. ফরহাদ আলী শুভ
সংস্কৃতির শেকড়

বাঙালির নিজস্ব শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পুণ্যভূমি ষোড়শ মহাজনপদের বঙ্গ, পুন্ড্র, সমতট, হরিকেল, গৌড় জনপদের সমন্বয়ে আজকের বাংলাদেশ। লোকনৃত্য, জারি, সারি, আউল, বাউল, মুর্শিদী, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, লোকগীতি, ফোক ও ফোকলোর, লালনগীতি, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রগীতি, হাসান রাজার গান, পপগান, আধুনিক গান, যে গানগুলোর গীতিতে গীতিকার সংস্কৃতির রসদ অতিযত্নে পরিবৈশিক প্রেক্ষাপটে পরিবেশন করেছে; সুস্থ মস্তিষ্কের মনন চর্চার পরিপূর্ণ ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ হোক সে অভিপ্রায়ের লক্ষ্যে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আধুনিকতার দাপটে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অতীতের মতো এই সংস্কৃতির চর্চায় অবক্ষয় ঘটেছে; যুগের স্রোতের অশ্লীল চর্চায় বিদেশি সংস্কৃতির রূপ রূপান্তরের রূপায়নে। সচেতন নাগরিকদেরও আজ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে এই শিল্পগুলোর চর্চা করতে দেখা যায় না, তাদের মধ্যেও বিদেশি সংস্কৃতির ঝোঁক মস্তিষ্কে জেঁকে বসেছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নিষেধ করছি না; কিন্তু দেশীয় সংস্কৃতি গুরুত্ব দিয়ে তারপর অন্য সংস্কৃতির কথা ভাবলে কি বেজায় দোষ হয়ে যাবে। প্রশ্ন রেখে গেলাম আপনাদের কাছে। আসুন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাঙালির অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন রসদ নতুনরূপে বিকৃত না করে উপযুক্ত পরিকল্পনায় প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তুলি। যা সংস্কৃতির সার্চলাইট হিসেবে আলো ছড়িয়ে যাবে স্মার্ট বাংলাদেশে। আমি সংস্কৃতির উদাহরণ হিসেবে প্রথমে সংগীতের দিক নিয়ে আলোচনায় তুলে ধরলাম। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পী এ আর রহমানের বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের মূল সুর বিকৃত করে হিরো আলমের মতো উপস্থাপনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে। দেখুন ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পীর কাছে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমি মনে করব সংস্কৃতির সাহিত্যিক অঙ্গনে তির ছোঁড়া, যা গায়কের অদূরদর্শিতার অভাব। তাহলে ভাবুন, ভবিষ্যতে আমাদের সংস্কৃতির বেহাল দশা কেমন হতে পারে। কিন্তু এ আর রহমান মূল সুর বিকৃত না করে সঠিক সুরে তার সিনেমায় বাস্তবতার নিরিখে কবির এই বিখ্যাত সৃষ্টিকে ব্যবহার করলে অবশ্য তা প্রশংসনীয় হতো। কিন্তু তা করা হয়নি। এখানে ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পী পুরোপুরি ব্যর্থ বলতেই হবে। হয়তোবা তিনি ভেবেছেন, জোড়াতালি দিয়ে নতুন আঙিকে নতুন নজরুলের ঝংকার তুলব আমি; তা কি হয় বলুন!

নজরুল তো নজরুলই, রবীন্দ্রনাথ তো রবীন্দ্রনাথই, জসীমউদদীন তো জসীমউদদীনই, বঙ্গবন্ধু তো বঙ্গবন্ধুই, লালন তো লালনই। এককথায় বাঙালির সংস্কৃতি তো বাঙালির আত্মা। তাই সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক সচেতন মহল শুধু আলোচিত সংস্কৃতির দিকগুলো নয়, অতীতের সংস্কৃতির যা হারিয়ে যেতে বসেছে, সেই সাংস্কৃতিক দিকগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবিকৃতভাবে নতুনরূপে, আধুনিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরুন। সচেতনতা সৃষ্টি করে উপযুক্ত পরিকল্পনায় পরিকল্পিত পদ্ধতিতে। নিজের সন্তানকে, নিজের শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিজ নিজ অবস্থানে, কর্মপরিসরে সংস্কৃতির নানা গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর তাৎপর্য সম্পর্কে জানুন, বলুন। এভাবেই তো এক এক করে দুই, দুই থেকে তিন- এভাবেই একসময় ১৭ কোটি মানুষের চিন্তায় ও হৃদয়ে সংস্কৃতির প্রতি উদারতার মনোভাব জন্মাবে; তারা তাদের শেকড়কে অনুসন্ধান করবে, তা হবে অনুসিন্ধ্যসুৎ হৃদয়ে ও পলকে। সংগীতের এই দিকগুলোর পাশাপাশি আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির কৃষ্টি কালচার, প্রথাগত রীতিনীতিও লালন-পালন করে ধারণ করতে হবে সংস্কৃতি রক্ষায়। এবার আসুন সংস্কৃতির আরেক দিক প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের সংক্ষিপ্ত বয়ানে- আজকের বাঙালির যে উন্নয়নের মহাযাত্রা ও প্রযুক্তির অগ্রগতি কয়েকশ’ বছর আগেও কিন্তু বাঙালির সংস্কৃতির শেকড়ে উন্নয়নের বিকাশ ও প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায়। কালের মহাযাত্রায় বাংলার আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে রাজনৈতিক উত্থান-পতনে অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। কিন্তু উন্নয়নের যে বিকাশ পুরোপুরি তো শেষ হওয়ার কথা নয়। কিছু এখনো কালের সাক্ষী হয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতো টিকে আছে ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাস সচেতন মহলের জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত