পুরুষকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর

অনাচার বন্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের খপ্পরে পড়েননি এমন মানুষ কমই আছে। রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহণ কিংবা দোকানপাট থেকে নিয়মিত চাঁদা নেয়ার কাজটি তারা করে থাকে। অত্যন্ত সংঘবদ্ধ জীবনযাপন করায় তাদের ব্যাপারে মানুষ কোনো কিছু বলার সাহস রাখে না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদের কোনো কিছু বলেন না। আর মানবিক কারণে মানুষ তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরাও মহান আল্লাহর সৃষ্টি তাই আল্লাহকে রাজি-খুশি করতে মানুষ তাদের অর্থ-কড়ি দিয়ে থাকে। কোনো বাসাবাড়িতে শিশু জন্ম নিলে তারা কোথা থেকে যেন খবর পায়। তারা চলে আসে। তারা সেই বাসায় গিয়ে নেচে-গেয়ে, হাতে বিকট শব্দে তালি দিয়ে টাকা দাবি করে। মানুষের ধারণা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের সন্তানের মা হওয়ার কোনো সক্ষমতা নেই, তাই তারা অন্যের নবজাতক নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে বখশিস দাবি করে। মানুষও সরল বিশ্বাসে তাদের সাধ্যমতো খুশি করে। তারা কখনো ভাবে না এরা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। তাদের রয়েছে দলীয় নেতা। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা চাঁদাবাজির টাকা তাদের নেতার কাছে জমা দেন এবং সেই নেতাই তাদের জীবন ধারণ ও প্রসাধনী সামগ্রী কেনার অর্থ সরবরাহ করে। চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে তারা ইচ্ছামতো খাওয়া দাওয়া করেন। যেহেতু তাদের কোনো ঘর-সংসার নেই তাই তারা ভোগ-বিলাসে জীবনযাপন করেন। তৃতীয় লিঙ্গের সন্তান হয়ে জন্ম নেয়ার পর তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে জীবনযাপন যারা করেন এমন সংখ্যা খুবই কম। আমাদের সমাজে যারা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। কিংবা যারা ভোটের অধিকার কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন তাদের অনেকে কিন্তু এক সময় পুরুষ ছিল। অপারেশনের মাধ্যমে আজ তারা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। তাদের মধ্যে অনেকে শিক্ষিত এবং কোটার আওতায় সরকারি চাকরিও করেন। পুরুষকে তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত করার একজন কারিগরের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাকে গ্রেপ্তার করার পর বেরিয়ে এসেছে নানা লোমহর্ষক কাহিনী। হাদিউজ্জামান নামের এই ভুয়া চিকিৎসক উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমে ওষুধের দোকানদার, এরপর হন চিকিৎসকের সহযোগী। দিনে দিনে শিখে নেন অপারেশনের কাজ। এক সময়ে বনে যান শৈল্য চিকিৎসক। চিকিৎসা বিদ্যার কোনো সনদ না থাকলেও গত ১২ বছরে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেন পাঁচ শতাধিক মানুষকে। এতে তার আয় হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। আর এ টাকা দিয়ে করেছেন দুইতলা ও তিনতলা দুটি বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ। কিনেছেন গাড়িও। ঢাকার ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে রোম-আমেরিকান নামক একটি হাসপাতালে শুরু করেন তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরের কাজ। তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরের জন্য কাছে আসা মানুষকে প্রথমে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে বলতেন। এরপর অপারেশন করে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতেন তিনি। সাধারণ রোগীদের মতোই রোগীকে অজ্ঞান করে পুরুষাঙ্গ কাটার পর বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল ইনজেকশন দিয়ে শারীরিক পরিবর্তন করাতেন। কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতোই মানসিক ও দৈহিক পরিবর্তন হয়। এ কাজ করতে তিনি লিঙ্গের অপারেশনের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে নিতেন। আর সিলিকন ঝেল দিয়ে বক্ষের আকার পরিবর্তন করতে প্রতি জনের কাছ থেকে নিতেন ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে। গত ১২ বছরে তিনি প্রায় ৫০০ জনের বেশি মানুষকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে রূপান্তর করেছেন। বক্ষের আকার পরিবর্তন করেছেন ২৫০ জনের বেশি। গত ৭ নভেম্বর যশোর সদর থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পিবিআইয়ের গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকার ১৩ দিন পর নানা চেষ্টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পরই ঢাকায় গুলশানের নিকেতনে তারই গড়ে তোলা একটি সেন্টার থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা পিবিআই। সেন্টারটিতে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করার নানা জিনিসপত্র আলামত হিসেবে পায় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও প্রতিরোধ আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনে ঢাকার ধামরাই থানায় মামলা করা হয়েছে। এর আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাদি। ছয় মাস জেলে থেকে আবার শুরু করেন একই কাজ। মানুষের সহানুভূতি নিয়েই চলে তৃতীয় লিঙ্গের জীবনযাপন। তবে সমাজে এ ধরনের অপরাধ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কেননা মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে সংসার চালাতে হিমশিম খায়। অথচ তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যারা হেসে-খেলে নেচে-গেয়ে চাঁদাবাজি করে জীবনযাপন করছেন। তাদের অর্থ সহায়তা না করলে নানা রকম কটুবাক্য ব্যবহার করেন। মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। টাকার জন্য জোরজুলুম করেন। প্রকৃত অর্থে যারা সত্যিকার অর্থে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য তাদের প্রতি মানুষ সহানুভূতিশীল হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যারা পুরুষ হয়ে এই ধরনের বিকৃত জীবনযাপন করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।