বেওয়ারিশ কুকুর এখন এক মহাবিড়ম্বনায় রূপ নিয়েছে। এদের লালন-পালন, এদের বিচরণ, এদের হিংস্রতা কিংবা এসব বেওয়ারিশ কুকুরের বিড়ম্বনা দিন দিন বাড়ছে। ফলে প্রতিবেশী বা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে মানুষ নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছে না। স্থানীয় সরকার প্রশাসন তাদের নিধন কিংবা দূরে কোথাও স্থানান্তর করতে গেলেও আসে বাধা, এদের বন্ধ্যাত্বকরণ করতে গেলে সেখানেও আপত্তি, নিজ উদ্যোগে কেউ বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করলে আসে আইনি জটিলতা, আবার পোষা কুকুর চিহ্নিত করার মতো কোনো সুযোগ না থাকায় মানুষ সেগুলো, মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েও কম ভোগান্তিতে পড়ে তাও নয়। আবার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর প্রতি মানবিক হওয়ারও সুযোগ কম। কেন না, অনেক সময় বেওয়ারিশ কুকুর মানুষকে কামড় দেয়। কুকুর কামড়ানোর পর তার চিকিৎসা নিয়েও ভোগান্তি কম নয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন কুকুর নিয়ে কাজ করে। তাদের দৃষ্টিতে কুকুর নিধন কিংবা কুকুরের ক্ষতিসাধন বড় ধরনের অপরাধ। তাহলে কি করা যেতে পারে। বেওয়ারিশ কুকুর কার্যত একটি বিড়ম্বনায় পরিণত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করে এর একটা সমাধানে না পৌঁছানো গেলে মানুষের জীবনযাপন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। বরগুনায় ফাঁদে ফেলে শতাধিক কুকুর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে জড়িত তিনজনের নামে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার স্থানীয় এক বাসিন্দা বরগুনা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতে এ মামলা করেছেন। পরে আদালতের বিচারক মাহবুব আলম মামলাটি আমলেও নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। আসামিরা বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর ইউনিয়নের খাকবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মামলার আইনজীবী জানিয়েছেন, কুকুর হত্যার অভিযোগে বরগুনা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রাণী কল্যাণ আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুধু রগুনায়ই নয়, রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। রাস্তা-ঘাট, অলিগলির মাথা কিংবা চিপাচাপায় বেওয়ারিশ কুকুরগুলো নিজেরা কামড়া-কামড়িতে জড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো কুকুরের কামড়া-কামড়ি মানুষের শরীরের ওপর আঘাত করে। কখনো কখনো কুকুর মানুষকে কামড়ও দেয়। কুকুর কামড়ালে বেশ কিছু টিকা একটি সময়ের ব্যবধানে নিতে হয়। সেটাও অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যারা শখ করে কুকুর পালন করেন, তারা তাদের নিজেদের বাসা-বাড়ির ভেতরে কুকুরগুলো রাখার ব্যবস্থা সাধারণত করেন না। পালিত কুকুরের গলায় কোনো বেল্টও পরিয়ে রাখেন না। তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করেন না। কুকুরের মলমূত্র অন্যের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের সমাজ অনেক প্রাণী প্রেমিক রয়েছেন, তারা থাকেন এক মহল্লায় আর কুকুরগুলো ছেড়ে দেন অন্য মহল্লায়। দিনে দুই একবার এসে খাবার দিয়ে যান। কুকুর মোটেও শান্ত প্রাণী নয়। এক মহল্লার কুকুর অন্য মহল্লায় গেলেই শুরু হয়, কামড়াকামড়ি। কুকুরের কামড়াকামড়ির ফলশ্রুতিতে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও ভয় পায়। এ কারণেই বেয়ারিশ কুকুর নিধন করার দাবি উঠে। একজনের শখ অন্যের অত্যাচারের কারণ হবে, সেটাই বা কি ধরনের আচরণ। বেয়ারিশ কুকুর নিধনের পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকা নগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। অলিগলিতে ২০-৩০টি পর্যন্ত কুকুর দল বেঁধে বিচরণ করে। বিশেষ করে রাতের বেলায় বা ভোরের নামাজের সময় মুসল্লিদের ওপর কুকুরের আক্রমণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুকুরের কামড়ে যে শুধু জলাতঙ্কের মতো প্রাণঘাতী রোগের ভয় থাকে তাই নয়, বরং হিংস্র কুকুরের কামড়ে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। নিরাপদ সড়ক তৈরি করা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু যত্রতত্র বেওয়ারিশ কুকুরের ঘোরাঘুরি নিরাপদ সড়কের বড় অন্তরায়। বিশেষ করে বেওয়ারিশ কুকুরের কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভয়ারণ্য, কেয়ার ফর ফজ, পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং আমরাই প্রকৃতি নামের সংগঠনগুলো কুকুর নিয়ে কাজ করছে। কুকুর থেকে সমাজকে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, সে বিষয়টি এসব সংগঠনকে অবশ্যই ভাবতে হবে। তাদের মধ্যে কুকুর প্রেম জাগ্রত করার সঙ্গে সঙ্গে মানবপ্রেমও জাগ্রত করতে হবে।