ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুবসমাজের অবস্থান সমসাময়িক ভাবনা ও প্রত্যাশা

রায়হান আহমেদ তপাদার
যুবসমাজের অবস্থান সমসাময়িক ভাবনা ও প্রত্যাশা

উন্নয়নশীল মানসিকতাসম্পন্ন তরুণদের সাধারণত একটি বিষয়ে চিন্তা করতে বিলম্ব হয় না। তারা পরিবার বা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে বদ্ধপরিকর। তারা নতুন বিষয়গুলো শিখতে এবং সমস্যার সমাধানে সৃজনশীল। এ ছাড়াও তারা সহজে কথা বলতে পারে এবং সমাজে সামাজিক মানসিকতার উন্নয়নে সক্ষম হয়। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। দেশের মোট শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে শিক্ষিত তরুণদের ৪২ শতাংশ বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। অনিশ্চিত আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান না হওয়া, গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের স্বল্পতা, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগের অভাব এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শঙ্কার কারণেই তাদের এ আগ্রহ। তবে বিদেশে যাওয়ার পর সংকটের সমাধান হলে ৮৫ শতাংশই আবার দেশে ফিরে আসার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩ শীর্ষক যৌথ সমীক্ষায় বিষয়টি উঠে এসেছে। বাংলাদেশের যুবসমাজের অবস্থান, সমসাময়িক ভাবনা ও প্রত্যাশা জানতে বিওয়াইএলসি ৫ বছর পরপর জাতীয় নির্বাচনের আগে এ সমীক্ষা পরিচালনা করে। জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিপ্রায়বিষয়ক এ জরিপের ফলাফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ দুটিই উঠে এসেছে। দেশের আট বিভাগের ৫ হাজার ৬০৯ তরুণ-তরুণীর মাঝে পরিচালিত জরিপটিতে দেখা যায়, ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশই দেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ মনে করেন, তাদের যে দক্ষতা রয়েছে দেশে সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান নেই। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই মনে করেন ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশের ধারণা, দেশে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ কম। তাছাড়াও যুবদের সম্পৃক্ততা ও ক্ষমতায়নের অভাব রয়েছে। এই বিশালসংখ্যক যুবদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করতে পারলে তারা দেশের উন্নয়ন তথা গণতান্ত্রিক রাজনীতির উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখতে পারবে না, তাই যুবদের সহযোগিতা নিয়ে দেশ তথা বিশ্ব এগিয়ে যাবে, রাষ্ট্রায়ত্ব, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই যুবদের কাজ করার সুযোগ করতে তৈরি করতে হবে, যেন তারা তাদের মেধা ও দক্ষতা বিকাশের সহায়ক পরিবেশ পায়। যুবদের সক্ষমতার প্রয়োগ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ও তাদের কর্মোদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাদের প্রতিনিধিত্বকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে আজ সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে যুব সমাজের অংশগ্রহণ কখনো কখনো আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে, কারণ আমরা সমাজের কল্যাণকর কাজের পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই যুবসমাজ নানা ধরনের ঘৃণ্য অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় যুবসমাজ নেশায় আসক্ত হয়ে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে তৈরি হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য কখনোই কাম্য নয়, কাম্য ছিলও না। কারণ আমাদের অতীত ইতিহাস কখনোই আমাদের এই শিক্ষা দেয় না। এ দেশের যুবসমাজ প্রগতিশীল ভাবনা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে যে অতীত স্বর্ণালী ইতিহাস তৈরি করেছে, তা আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তবে বর্তমানে কেন, যুব সমাজের মধ্যে কুলুষিত রাজনৈতিক দীক্ষা আর রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অপব্যবহারের মাধ্যমে বিত্ত-বৈভব কুক্ষিগত করার নগ্ন মানসিকতা তাদের মগজে ঠাঁই পেয়েছে? তবে একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি বলতে চাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত