সর্বত্র বহুমুখী দূষণের ঝুঁকি

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গর্ভবতী মা ও শিশু, বাড়ছে অটিজম

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আশপাশে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ এবং তেজষ্ক্রীয় রশ্মির বিকিরণ থেকে মানুষ রেহাই পাচ্ছে না। সর্বত্র এ ধরনের বহুমুখী দূষণের কবলে মানুষ উদ্বিগ্ন। দীর্ঘদিন ধরে এমনি নানারকম দূষণ এখন শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের অন্যান্য শহর পেরিয়ে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। অতি দূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গর্ভবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর। নির্দিষ্ট সময়ে আগেই শিশুর জন্মগ্রহণ এবং নানারকম প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য এসব বহুমুখী দূষণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ শিশুর মধ্যে ১ হাজার জনের অটিজম বা প্রতিবন্ধিতার বৈশিষ্ট্য আছে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বায়ু মানের সূচক অনুযায়ী বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বের মধ্যে কখনো দ্বিতীয় আবার কখনো তৃতীয় হয়। অতি দূষণে খাদ্যের হজম প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আধুনিক প্রযুক্তির অভিশাপের তালিকায় নতুন সংযোজন রেডিয়েশন বা তেজষ্ক্রিয়তা। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের চাইতেও ভয়াবহ দূষণ হলো- মোবাইল টাওয়ার, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও বিদ্যুতের লাইনের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। যা মানুষের ব্রেইন টিউমার, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, হৃদরোগ ও গর্ভপাতসহ অনেক জটিল রোগের কারণ। অর্থাৎ এই তিন ধরনের দূষণই অটিস্টিক শিশুর জন্মহার বৃদ্ধির পাশাপাশি মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। ঢাকায় বসবাসরত শিশুদের কথা বিবেচনা করি, তাহলে আমরা দেখতে পাই বায়ু ও শব্দদূষণের প্রভাবে এইসব শিশুর ওপর বায়োলজিক্যাল প্রভাব পড়ছে। শিশুদের শব্দ সেনসেবিলিটি ও মেটাবলিক সিস্টেমের সেনসিবিলিটি রয়েছে। যার কারণে শিশুদের আচরণগত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানসিক বিকাশের উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হচ্ছে। আর অটিজম বা নিউরো ডেভেলপমেন্টে ডিজএবিলিটির সঙ্গে রেডিয়েশনের প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। বায়ুদূষণ ও পরিবেশ দূষণের সঙ্গে অটিজমের একটা সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশ দূষণে ভারী কিছু ধাতু থাকে, সেগুলো বাতাসে মিশে গিয়ে গর্ভাবস্থায় শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেটা শুধু অটিজম নয়, মানসিক বিকাশজনিত রোগও সৃষ্টি করে। বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণের কারণে শিশুর নিউরো ডেভেলপমেন্টে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। গর্ভাবস্থায় নবজাতকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে বায়ুদূষণ। অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের মধ্যদিয়ে আর্থিক সক্ষমতা ও বিলাসিতা বৃদ্ধি পেলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করার কারণে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন আমাদের মাটি, পানি, বায়ু কিংবা শব্দসহ অন্যান্য বিষয়কে দূষিত করে তুলছে। এটা সম্মিলিতভাবে জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। শুধু এককভাবে পরিবেশ দূষণ নয়, আমাদের খাদ্যাভ্যাসও স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। অতি দূষণের সম্মিলিত ফল হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয়; যার একটি হচ্ছে অটিজম। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলো। যার প্রভাবে ঢাকার চারদিকে কুয়াশার মতো ধূলিকণা ভাসছে।

গবেষকরা বলছেন, উচ্চ মাত্রার দূষণ অটিজমের সম্ভাবনা দ্বিগুণ করে দেয়। বায়ুতে মিশে থাকা দূষিত ক্ষুদ্র কণা ফুসফুস থেকে রক্তে প্রবাহিত হয়ে শিশুদের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৩৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে বর্তমানে বাচ্চাদের দ্রুত ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা কমন একটি বিষয়। যত বেশি অসুস্থ হবে, তত তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আর ঠান্ডাজনিত রোগ নিরাময়ে যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেটি শিশুর মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে। বায়ুদূষণে শিশুর নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয় অর্থাৎ মস্তিষ্ক যতটুকু অক্সিজেন পাওয়ার কথা সেটা পায় না। অক্সিজেন না পেলে শিশুর মস্তিষ্ক যথাযথভাবে বৃদ্ধি পাবে না। বায়ুদূষণের কারণে শিশু ব্রনকাইটস ও শ্বাসকষ্টজনতি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়নের ফলে নবজাতক শিশুর বিকাশজনিত রোগ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো বেড়ে যাচ্ছে। যদিও এটা যে অটিজমের জন্য দায়ী, সেটা সরাসরি বলতে পারছি না। কারণ এখনো পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয়নি। শব্দদূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। এমনি পরিস্থিতি থেকে মানুষকে রক্ষায় প্রশাসন এগিয়ে না এলে আগামী দিনে দেশে বিকলঙ্গ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। তাই এসব দূষণ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।