ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা বায়ুবিদ্যুৎ

অমৃত চিছাম
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা বায়ুবিদ্যুৎ

সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনে বিভিন্ন অভিযোজনের মাধ্যমে খাপ খাইয়ে পৃথিবীতে টিকে আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের চিন্তাচেতনায় আমূল পরিবর্তন লক্ষণীয়। সেই আদিম গুহা বাস থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগে এসে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ সব কিছুতেই পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশও এসব পরিবর্তনের বাইরে নয়। মানবসভ্যতার আমূল পরিবর্তনের সঙ্গে যে বিষয়টি অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো বিদ্যুৎ। বর্তমানে এমন একজন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কি না বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারের অন্যতম একটি প্রধান কারণ হলো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অধিক পরিমাণ ইলেকট্রনিকস ডিভাইসসামগ্রীর ব্যবহার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন? এ বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রায় প্রতিটি সদস্য কোনো না কোনোভাবে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আর যার মূল ফুয়েল হিসাবে কাজ করে বিদ্যুৎ। পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ বিশাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা থেকে সহজেই অনুমেয় এই যে, দেশে দৈনিক কি পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের অধিকাংশ শিল্প খাতে দৈনিক বিপুল পরিমাণ চাহিদা রয়েছে বিদ্যুতের। দিন দিন যেহারে কলকারখানা, দোকানপাট, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, তার একটি মূল স্তম্ব হলো বিদ্যুৎ। যা কি না বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় জ্বালানি। দুঃখের বিষয় এই যে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সারাবিশ্বে, বিশেষ করে ইউরোপে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় সিংহভাগই জ্বালানিনির্ভর। দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এ বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদনে কি পরিমাণ জ্বালানির ব্যবহার হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচলিত উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে- তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা। এই তিনটিই হচ্ছে জীবশ্ম জ্বালানি। গত বছর বিশ্বব্যাপী নির্গত হওয়া গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোর, প্রায় ৭৩ শতাংশই এসেছে জ্বালানি খাত থেকে। তাই এখন সময় হয়েছে সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার। এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ হবে, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কার্যকরী নতুন সম্ভাবনার নাম হতে পারে বায়ুশক্তি। যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে নতুন সম্ভাবনার ধার উন্মোচন করতে পারে। একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনে বায়ুশক্তির রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। দেশে শক্তির মিশ্রণকে বৈচিত্র্যময় করতে, ঐতিহ্যগত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে, একটি সবুজ এবং আরো টেকসই ভবিষ্যতে অবদান রাখতে এই নবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে আরো সচেতন হতে হবে। বায়ুশক্তি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন সেইসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে অগ্রণী অবস্থানে রাখতে সক্ষম। সাধারণ অর্থে বায়ুবিদ্যুৎ বলতে বোঝায় বায়ুবাহী বা বায়ুচালিত বৈদ্যুতিক শক্তিকে। এটি বায়ুরগতি বা বায়ুর চাপ ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, বায়ুবাহী বায়ুজ এবং বায়ুপানিজ চলাচলে ইলেকট্রিক জেনারেটর চালানো হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বায়ুবিদ্যুতের জন্য উপযোগী পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। উপযুক্ত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের অভাবে অপার সম্ভাবনার বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে আশানুরূপ সাফল্য ধরা দিচ্ছে না। দেশে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চলসহ মোট ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার এলাকা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে বিদ্যুৎ খাতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। বলে রাখা ভালো, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী নদীর মিরসরাইয়ের উপকূল পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সারা বছর যে পরিমাণ প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহ পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করেই কয়েকটি বায়ুবিদ্যুৎ স্টেশন নির্মাণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনআরইএলের প্রতিবেদনের দেয়া তথ্য অনুসারে, দেশে উপকূলীয় প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা রয়েছে, যেখানে বাতাসের বেগ ৫.৭৫-৭.৭৫ মি./সে. যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গেলে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ পাওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ৯টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। স্থানগুলো এবং স্থানভিত্তিক বায়ুপ্রবাহের মাত্রাগুলো- রংপুর (৪.৮৬ মি./সে.), ময়মনসিংহ (৪.৬২ মি./সে.), রাজশাহী (৪.৬৬ মি./সে.), সিলেটে (৪.২১ মি./সে.), চাঁদপুর (৫.৯ মি./সে.), সীতাকুন্ডু (৬.২৮ মি./সে.), পারকি বিচ (৬.১৮ মি./সে.), ইনানী বিচ (৬.৪৫ মি./সে.), মংলা (৫.৮৭ মি./সে.)। বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে দেশে সর্বপ্রথম, ১৯৮২ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয় এবং ৩০টি আবহাওয়া তথ্য স্টেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দেখা যায় যে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বায়ুর গতি প্রকৃতি অনুসারে ওই স্থান দুটি বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। পরবর্তীতে আরো বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০০৫ সালে ফেনীর মহুরি নদীর তীর ও সোনাগাজী চরাঞ্চল ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ৬ একর জমির উপর স্থাপন করা হয় দেশের সর্বপ্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। যা ছিল চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য; কিন্তু সামান্য হলেও পল্লীবিদ্যুতের একটি ফিডারে যোগ হয়ে তা বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করছে। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালের দিকে কিছু কারিগরি সমস্যা, অব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা না থাকায় এর কার্যক্রম বেশ কয়েকবছর অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। পরবর্তীতে সংস্কার করে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার পুনরায় চালু করা হয়। চালু হওয়ার পর ২০১৪ সালে মোট উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২ লাখ ২ হাজার ৪৩৯ ইউনিট। তখন দৈনিক উৎপাদনের গড় ১৬ হাজার ৮৩০ ইউনিট। বর্তমানে পিডিবির প্রজেক্টের আওয়তায় প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে চারটি টারবাইনের সাহায্যে বাতাসকে কাজে লাগিয়ে ২২৫ কিলোওয়াট করে ৯০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে যার সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ০.৯০ মেগাওয়াট। এছাড়াও ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় চালু হয় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৫০টি টারবাইন দ্বারা ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আশপাশের প্রায় ৫৫০ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারে দেশের সর্ববৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ৩১ মার্চ। ২০২৩ সালের ২৪ মে, কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সাহায্যে ঝিলংজা বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, ২২টি টারবাইনের সবগুলো চালু হলে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুশক্তি থেকে ১৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এসডিজি ৭ এ বলা হয়েছে যে, সাশ্রয়ী, টেকসই ও দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের প্রতি জনসাধারণকে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে পরিবেশের উপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। যেহেতু বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হয় না, সেহেতু কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও থাকে না। অথচ জ্বালানি তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে একদিকে যেমন অধিক পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা থাকত ও একইসঙ্গে জ্বালানির ব্যবহারের জন্যও আলাদা ব্যয় করতে হতো। যেহেতু বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যবহার হয় না, সেক্ষেত্রে পরিবেশর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাটি, পানি, বায়ু তথা পরিবেশ দূষণের কোনো প্রশ্নই আসে না। দেশের উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের অপার সম্ভবনা রয়েছে। এ বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে বিদ্যুৎ খাতে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন সাধিত হবে, সেইসঙ্গে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি বহুলাংশে হ্রাস পাবে। বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে পারলে জ্বালানি খাতে ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কার্যকরী অংশীদার হতে পারবে। এর ফলে বর্তমান বৈশ্বিক সংকটও কাটিয়ে ওঠা সহজ হয়ে যাবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হতে হবে, যাতে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ হেলায় না হারায়। আরো উত্তর উত্তর গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে উক্ত সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে হবে। আর আশার কথা এই যে, বায়ুবিদ্যুৎ যেহেতু নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস তাই এর শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। জনগণকেও আরো সচেতন হতে হবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ-সুন্দর তথা দূষণমুক্ত পরিবেশ রেখে যেতে পারি। সর্বোপরি ২০৩০ সালে এসডিজি বাস্তবায়নে বায়ুবিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে কাজ করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। পরিশেষে, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি- এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত