ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্যাম্পাসের অনাচার বেদনাদায়ক

শিক্ষকদের হতে হবে কলুষমুক্ত ও নির্মল
ক্যাম্পাসের অনাচার বেদনাদায়ক

মানুষ তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। সেখানে লেখাপড়া করে একজন উচ্চ শিক্ষিত ছেলে বা মেয়ে পিতামাতার মুখ উজ্জ্বল করার পাশাপাশি নিজের জীবনের উন্নয়ন সাধন করে। শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান। সেখানে বিবেকবান ও রুচিশীল মানুষের কর্মতৎপরতার মিলন ঘটে। মানুষ হয় বিবেকবান ও মানাবাধিকারে সমুজ্জ্বল। ক্যাম্পাসের শিক্ষক, ছাত্র কিংবা বিশ্ববিদ্যলয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন হবে আদর্শভিত্তিক। তাদের প্রতিটি কাজ কর্ম হবে অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয়। তাদের আচার-আচরণ হবে অন্যের জন্য আদর্শের মাপকাঠি। তবে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষক কখনো কখনো সেই চিন্তাধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বনজঙ্গলের বাসিন্দাদের মতো আচরণ করে। তাদের এই অনাচারের কাহিনি যখন গণমাধ্যমে আসে, তখন শ্রদ্ধার স্থানটি ঘৃণায় ঢেকে যায়। বাংলাদেশে যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো কখনো গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় সবচেয়ে বেশি। আর সেই শিরোনামটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে মানুষের নজরে আসে। একজন শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও পিতামাতার সমতুল্য। আর সেই শিক্ষক যখন তার মেয়ের বয়সি শিক্ষার্থীর ওপর কুদৃষ্টি দেয়, অশালীন আচরণ করে তার সঙ্গে অনাচারে লিপ্ত হয়, তখন কেন যেন আর মেনে নেয়া যায় না। একটা মেয়ে যখন হল জীবনযাপন করে, তখন তার পিতামাতার ঘুম হারাম হয়ে যায়। তার চেয়ে বেশি চিন্তা হয়, তার ইজ্জত ও আব্রু নিয়ে। পিতার সমতুল্য শিক্ষক যখন তার জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠে, তখন আর সেই শিক্ষা গ্রহণে কোনো মর্যাদা থাকে না। শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে যদি ইজ্জতকে বিসর্জন দিতে হয়, তবে সেই শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষাগ্রহণের জন্য না যাওয়াটাই শ্রেয়। অথবা সেটিকে সহশিক্ষার পরিবর্তে একক শিক্ষাদানের প্রতিষ্ঠান করার বিষয়টি ভাবতে হবে। ছাত্রদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পুরুষ শিক্ষক এবং মেয়েদের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান এবং সেখানে নারী শিক্ষক নিয়োগ দিলে কি পরিস্থিতির উন্নতি হবে সেটাও ভাবা দরকার। নামমাত্র কয়েকজন শিক্ষককের কারণে স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, সেটাই বা কেন সেই প্রশ্নও থেকে যায়। এসব বিকৃত মনের শিক্ষক কী আসলেই ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্য অপরিহার্য নাকি ক্ষমতাবান সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। যে শিক্ষক এই ধরনের আচরণের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সেটি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনের রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করেছে। তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এ ঘটনায় নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ভিসির আশ্বাসই কি যথেষ্ঠ- সেই প্রশ্নও জাগে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে সম্মত হননি ওই শিক্ষক। তবে ‘মৈন্যতা সম্মাতির লক্ষন’ এটাই কি প্রকাশ পায়। ভুক্তভোগী ছাত্রীরা জানান, হল সংক্রান্ত কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কাছে গেলে তারা তারা নিজের কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে নানা ধরনের সাহায্যের প্রলোভন দেখান এবং একা তার সঙ্গে দেখা করতে, তার কাছ থেকে বই নিতে বলেন। এরপর তার মুঠোফোন নম্বর নেন এবং একরকম জোর করেই তার মেসেঞ্জারে নক করেন। পরিবেশের আনুকূল্য পেলে ছাত্রীর গায়ে হাত দেন। কখনো কখনো আপ্যায়ন করার প্রস্তাব দেন। অনেকে শিক্ষকদের এসব অস্বস্তিকার আচরণ সহ্য করতে না পেরে মানসিক ট্রমায় চলে যায়। কাউকে কিছু বলতে না পেরে ভয় ও ক্ষোভে গ্রামের বাড়ির পথে পা বাড়ায়। ফলে ক্লাশ ও পরীক্ষায় অংশ নেয়া তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনিশ্চিত হয়ে যায় শিক্ষাজীবন। এ ধরনের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় উত্থাপন করে অভিযোগ যার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো- সেটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করতে হবে। আর এই জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে সেটি অভিযুক্তের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পসের প্রবেশ পথে প্রকাশ্য স্থানে অভিযুক্ত শিক্ষকের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে কি না, সেটাও ভাবতে হবে। তাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পসে ঢুকেই ওই অভিযুক্ত সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যাবে। কোন শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের ধারের কাছে যাবে না। ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের অনাচার কীভাবে রোধ করা যায়, সেটি নিয়ে নিয়ে একটা উম্মুক্ত আলোচনাও হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উন্মুক্ত স্থান রয়েছে, সেখানে এই ধরনের আলোচনা হতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনি তুলে ধরবে। ভিক্টিমের কথা অন্যরা শুনে সচেতন হবে। তারপরও যদি শিক্ষক অনাচার বন্ধ না হয়, তাহলে আইন-আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। ওই শিক্ষককে সারা জীবনের জন্য শিক্ষাঙ্গন থেকে বিতাড়িত করতে হবে। একজন ছাত্রীর জন্য একজন শিক্ষক যখন বাঘ কিংবা সিংহের মতো ভয়ংকর হয়, তাহলে সেই শিক্ষককে সরকার কেন লালনপালন করবে। অভিভাবকদের আশা থাকবে, আর যেন ভবিষ্যতে এমন কোনো শিক্ষকের আর্বিভাব ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে না ঘটে। শিক্ষকদের চরিত্র হতে হবে কলুষমুক্ত ও নির্মল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত