ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দশম দাফায় বিএনপির অবরোধ

অগ্নিসন্ত্রাস করে মানবাধিকার দিবস পালন প্রশ্নবিদ্ধ
দশম দাফায় বিএনপির অবরোধ

আজ ভোর ৬টা থেকে আগামী শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত নবম দফায় টানা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তিনি এর আগেও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন অজ্ঞাত স্থান থেকে। বিএনপি অবরোধ কর্মসূচির নামে ভাড়াটেদের দিয়ে রাজধানীসহ দেশের কোন কোন স্থানে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। বিনিময়ে পেয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধমে নগদ অর্থ। অষ্টম দফা পর্যন্ত পালিত অবরোধ কর্মসূচির পালনের খবর দেশের জাতীয় গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে। বিএনপির এই কর্মসূচি পালিত হোক কিংবা না হোক এখবরটি হয়তো ইতিহাস হয়ে থাকছে। বিএনপির ডাকা ইতোপূর্বের হরতাল অবরোধ কমসূচি পালনের ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রার কোনো চরিত্র দেখা যায়নি। কোন দিন অবরোধ আর কোন দিন হরতাল আর কোন কোন দিন এই কর্মসূচি- বাইরে তা পৃথক করা যায়নি। বিএনপির অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিতে স্বাভাবিক জীবনযাপনে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতাকমী ও সাধারণ মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আগুন সন্ত্রাস করা অনেক কঠিন। সে কারণে বিএনপির নেতা কর্মীরা পর্দার আড়ালে থেকে ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের দিয়ে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। হরতাল-অবরোধ কমূসূচি এমনভাবে দেয়া হচ্ছে, যাতে কেবল অফিস খোলা থাকছে প্রতি মঙ্গলবার। মঙ্গলবারের দিনটি আগুন সন্ত্রাসমুক্ত থাকছে। হরতাল অবরোধের ডাক দিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ায় কমসূচি পালনে বিএনপি কোনো নেতাকর্মী রাস্তায় থাকছে না। তবে নবম দফার চলমান এ অবরোধ শুরুর আগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া আগের অবরোধ চলাকালে আগুনের ঘটনায় বেশ কয়েকজন দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন এক পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং অনেকে আহত হন। সমাবেশ ভন্ডুল করার প্রতিবাদে পরের দিন হরতাল আহ্বান করে বিএনপি। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে মোটামুটি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে রাজপথের এই বিরোধীদলটি। এর মধ্যে তপশিল ঘোষিত হওয়ায় এর প্রতিবাদে দুই দিন হরতাল পালন করা হয়েছে। এখন নিয়মিতভাবে সপ্তাহের মঙ্গলবার বাদে বাকি চার দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলো। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলাকালে দেয়া আগুনে যানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এটাও তো এক প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিএনপি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। তারা এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার জন্যও আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল। তবে তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা অংশ নিল না। তাহলে তারা আগামী দ্বাদশ নিবাচন প্রতিহত করতে কী ধরণের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নেবে, সেটা এখনো ধারণা করা যাচ্ছে না। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামাতের অগুন সন্ত্রাসের নির্মম শিকার মানুষজন এখনো বিচারের আশায় অপেক্ষা করছে। মাঝেমধ্যে তারা দাবি আদায়ে বিভিন্ন কমসূচি পালন করে। যারা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে হরতাল অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা কীভাবে মানাবাধিকার দিবসের কর্মসূচি পালন করে- সেই প্রশ্ন এখন জাতির সামানে আসছে। যাদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, তারা কীভাবে মানবাধিকার সমুন্নত রাখবে। মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচি তাদেরই পালন করা উচিত, যারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবিচল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত