গাজায় মানবিক বিপর্যয়

জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রশংসনীয় পদক্ষেপ

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় মূল শহর খান ইউনিসে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে। এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলা তীব্রতর হওয়ায় সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গাজায় গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। তাদের বড় একটি অংশই শিশু। ইসরাইলের বিরামহীন হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের কাছে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো না গেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ‘নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ার ফলে ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ত্রাণকর্মীদের জীবনও বিপন্ন হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে বেসামরিক সাধারণ মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। গাজায় ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার সম্বল হলো এই ত্রাণের খাদ্যশস্য।’ ডব্লিউএফপি বলেছে, তাদের কর্মীদের জন্য গাজা ভূখণ্ডে নিরাপদ, বাধাহীন ও দীর্ঘকালীন যাতায়াতের ব্যবস্থা করা গেলে তারা মানুষের কাছে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে। শুধু দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হলেই এ মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য নেই।

পান করার মতো সুপেয় পানিও বাসিন্দারা পাচ্ছেন না। গাজার পরিস্থিতি মহাবিপর্যয়কর হতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক জানিয়েছেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘চূড়ান্ত বিভীষিকাময়’ পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, গাজায় রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। ফলকার টুর্ক জানান, গাজার বাস্তুচ্যুত ১৯ লাখ মানুষকে দক্ষিণ গাজার ছোট্ট একটি এলাকায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেখানে তাদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। গোটা পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। গাজার পরিস্থিতি প্রতি মিনিটে অবনতি হচ্ছে জানিয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনে ত্রাণসহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গোটা গাজা উপত্যকা এখন বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে। তবে গাজা ইস্যুতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৯৯ ধারা জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এই ধারা সংকট সমাধানের সবচেয়ে শক্তিশালী কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বলে মনে করা হয়।

২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো এই ধারাটি আহ্বান করেছেন গুতেরেস। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ জারির আহ্বান করেছেন আন্তোনিও গুতেরেস। এই ধারায় বলা আছে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন জাতিসংঘ মহাসচিব। একটি মানবিক বিপর্যয় এড়াতে নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে। জাতিসংঘ মহাসচিরের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। ভয়ংকর ক্ষুধা সংকটের মুখে গাজা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই আহ্বান জানাল জাতিসংঘ। উপত্যকাটিতে ৭ দিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি থাকার সময় কিছু ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করে। তা কিছু মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল্য। ডব্লিউএফপি বলছে, নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ায় ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। তাই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি এবং সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান চায় সংস্থাটি। দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গত বুধবার গাজায় ইসরাইলি অভিযানের ৬১তম দিনের আগের ২৪ ঘণ্টা ইসরাইলি হামলায় আরো ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এরই মধ্যে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। অন্যদিকে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২০ জনের মতো সেনা রয়েছেন। এ ছাড়া গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে আরো ৮০ জনের মতো ইসরাইলি সেনা প্রাণ হারিয়েছে।