স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা সেবা

নিশ্চিত হবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সুবিধা

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মা ও শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে এরমধ্যেই ৫০০টি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস শুরু হয়েছে। রাজধানীর মিন্টো রোডের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন হলে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ কর্তৃক ৯ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ’ পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এই আশাব্যঞ্জক খবর শোনান। আমাদের দেশে দিন দিন চিকিৎসাসেবা ব্যয়বহুল হওয়ার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য হচ্ছে না। দেশের ৫০০টি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিলে অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। মানুষ যদি মনে করে যে, তার বসবাসের আশপাশের এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাহলে সে মানসিকভাবে অনেকটা শক্ত থাকবে। বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার মতো চিন্তা-ভাবনা তাদের মধ্যে থাকবে না। এছাড়া সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা অনেকটাই বিনামূল্যে এবং যেসব ওষুধ দেয়া হয়, সেগুলোও বিনামূল্যে পাওয়া যায়। ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। বাস্তব চিন্তা-ভাবনা থেকে বলা যেতে পারে যে, বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য মানুষ গেলে একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়।

চিকিৎসকদের সঙ্গে বেসরকারি হাসপতাল কিংবা ক্লিনিকের একটি অলিখিত চুক্তি থাকে, যতদূর সম্ভব বেশি বেশি টেস্ট দেয়ার। কেননা, বেশি টেস্টে বেশি আয় বেশি কমিশন। চিকিৎসকদের চিকিৎসাপত্রে দেয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা যে কোনো স্থান থেকে করানো হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে কমিশন চলে যাবে। কমিশন বাণিজ্যের কারণে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। ৫০০টি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পারলে স্বাস্থ্য খাতের এই সংকট অনেকটা দূর হবে। ‘দেশে এখনো ৬৫ হাজার শিশু এবং সাড়ে ৪ হাজার মা বছরে মাতৃত্বকালীন মারা যায়। এই সংখ্যা অনেক। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার অন্তত ৫ ভাগ মা ও শিশু মৃত্যু হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তারপরও বছরে এত মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার ৭০ শতাংশ কমানো ও শিশু মৃত্যুহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে, মায়েদের হোম ডেলিভারির পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির দিকে মনোযোগী হতে হবে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস ব্যবস্থায় কাজ করতে হবে।

বর্তমানে প্রাইভেট স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে সিজারিয়ান ব্যবস্থা বেড়ে গেছে। দেশে এখন সিজার করে বাচ্চা নেওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনা কারণেই অনেক মায়েরাও সিজার করে বাচ্চা নিতে আগ্রহী থাকেন। এটি কাম্য নয়। একবার সিজার করে বাচ্চা নিলে ওই মায়ের পরবর্তী সময়ে বাচ্চা ডেলিভারিতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া সারা জীবনের জন্য অন্যান্য সমস্যা নিয়ে চলতে হতে পারে। দেশে হোম ডেলিভারি এবং সিজার করে বাচ্চা নেয়া অর্ধেকের বেশি কমাতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা স্বাস্থ্য খাতকেও এগিয়ে আসাতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং মানুষ তার সুফল ভোগ করছে। বিশেষ করে বিনা পয়সায় করোনার চার ডোজ পর্যন্ত টিকা দিয়ে বিশ্ব মডেল স্থাপন করেছে। অনেক উন্নত দেশের পক্ষে বিনামূল্যে নাগরিকদের করোনার মতো মহামারির টিকা দেয়া সম্ভব না হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায় সেটি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সরকারি খাতে গড়ে উঠা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে ডাক্তার, নার্স ও টেকনেশিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুধু সরকারি খাতে নয়, বেসরকারি খাতে যাতে করে চিকৎসাসেবা সহজলভ্য ও সম্প্রসারিত হয়, সে জন্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।