ঘোষণাতেই বাড়ল পেঁয়াজের দাম

পরিস্থিতি সামাল দিতে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। এমন খবর গণমাধ্যমে আসতে না আসতেই দেশের বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত শুক্রবার এক আদেশে রপ্তানি বন্ধের খবর জানায় ভারত। তবে এই সিদ্ধান্ত আসার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই একলাফে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। ভারত কি হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভারত যদি বাংলাদেশ সরকারকে তাদের এই সিদ্ধান্ত আগেই জানাত, তাহলে বাজার মনিটরিং সংস্থা একটা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা নিতে পারত। পেঁয়াজের দাম নিয়ে এভাবে হুলূস্থল কাণ্ড হতো না। ভারত বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দেবে না এমন খবর শুনে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির নানা রকম ফন্দি-ফিকির করতে থাকে। রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ভারতে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে প্রশাসনকে জনবিক্ষোভ সামাল দিতে অনেক বেগ পেতে হয়। অথচ বাংলাদেশের মানুষ হঠাৎ করে পণ্যমূল্যকে তাদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর পেছনের কারণ হিসেবে বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না, তাই সরবরাহ কম। আর সে কারণেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু যে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে- তা নয়, আমাদের দেশীয় পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে এমন সুযোগের সন্ধানে থাকে এবং কোনো একটা অজুহাত পেলে সেটিকে সুযোগ হিসেবে নেয়।

ভারত বাংলাদেশকে ৩ মাস পেঁয়াজ দেবে না, এমন খবরে শুক্রবার সকালেই রাজধানীর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এছাড়া পাবনার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ টাকা করে। তবে সন্ধ্যার পরই পাল্টে যায় পেঁয়াজের বাজারের দৃশ্যপট। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হতে থাকে ১৫০ টাকা করে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে থাকে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি করে। মূলত দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবর সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে। এরপরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন তারা। কোনো একটা ঘোষণা আসার আগেই সক্রিয়ভাবে দাম বেড়ে যায়। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, আগামী ১৫ দিন পরই বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে, দাম তখন কমে যাবে। তবে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ভয় দেখাচ্ছে এই বলে যে, বৃষ্টিতে কৃষকের পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। যার কারণে নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম তেমন একটা কমবে না। তবে এটাও ঠিক যে, দেশের সব এলাকায় বৃষ্টি হয়নি, আর সব পেঁয়াজের খেত বৃষ্টিতে নষ্ট হয়নি। তাই দাম কমবে না, এই আতঙ্কজনক বার্তাটি আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা আগাম জানিয়ে দিয়েছেন।

পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অনুরোধের পর কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেওয়া প্রদত্ত অনুমতির ভিত্তিতে। যেসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলো আসবে। দাম বাড়ার খবরে প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন কোনো ব্যবস্থা নিল না, সেটা বোধগম্য নয়। ‘কম খান’ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে নিজেদের দায়মুক্ত করার ব্যথ্য চেষ্টা অতীতে চালানো হয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর শোনার পরপরই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে আশার খবর হচ্ছে, এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামছে- জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা-অধিকার জানিয়েছে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালানো হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ফলে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় তেমন প্রভাব পড়বে না। ভোক্তা-অধিকারের তথ্য অনুসারে গতকাল থেকে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করার কথা। ঢাকায় অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিমের দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সেটির কার্যকর বাস্তবায়ন দরকার।