ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি

আজহার মাহমুদ
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি

খাদ্য মানবজাতির মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই খাদ্য নিয়ে যখন আলোচনা আসে, তখন খাদ্যের নিরাপত্তা এবং পুষ্টিও জড়িত থাকে। আবার নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রয়োজন খাদ্য উৎপাদনে নিরাপদ প্রযুক্তি। সুতরাং একটা বিষয়ের সঙ্গে আরেকটা বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিরাপদ খাদ্য পেতে আমাদের নিরাপদ খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করাও নিশ্চিত করতে। আমরা জানি বিশ্বে এরইমধ্যে তিনটি শিল্পবিপ্লব হয়ে গেছে। তবে আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, বর্তমান সময়ে শুরু হওয়া ডিজিটাল বিপ্লব। এ নিয়েই এখন সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এটিকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এখন বলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এতদিন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা যেভাবে চলেছে, সেটা বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ভিত্তির ওপর শুরু হওয়া ডিজিটাল এ বিপ্লবের ফলে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে, যা আগে কখনও হয়নি।’ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এখন প্রযুক্তি প্রভাব আসছে। যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা সবকিছু। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, ইন্টারনেট অব থিংস, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, রোবোটিকস, জৈবপ্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়গুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেছে। এখন উৎপাদন খাতে মানুষের শ্রমকে কতটা কমিয়ে আনা যায়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে পৃথিবীতে। একইসঙ্গে উৎপাদন দক্ষতা, পরিবর্তন দক্ষতা ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাকে সহজীকরণ করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে আমাদের দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তির গুরুত্ব রয়েছে অধিক। কল সেন্টার, রোগ নির্ণয়, পূর্বাভাস জানা, ঋণ ও পণ্য বিতরণ, কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, তথ্য প্রচার ইত্যাদি কাজ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে করলে ফসল উৎপাদন সহজ ও বেশি হবে। এছাড়া জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮-তে সবচেয়ে চমকপ্রদ সংযোজন ছিল, কৃষি উন্নয়নে ন্যানোপ্রযুক্তির সংযোজন। কৃষি উন্নয়নে ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো হিসেবে (১) ফসলের রোগ নির্ণয়, জাতভিত্তিক পুষ্টিচাহিদা নির্ণয়, পুষ্টি আহরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি; (২) ন্যানো-সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ; এবং (৩) কৃষিতে ও কৃষি পরিবেশে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্তকরণ এবং শোধনসহ ন্যানোপ্রযুক্তির সার, বালাইনাশক উদ্ভাবন ও ব্যবহারের মাধ্যমে উপকরণ দক্ষতা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণ।

সময়ের পরিক্রমায় কৃষিব্যবস্থাপনা ও মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রমবর্ধমান বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ষাটের দশকের গোড়ায় বিশ্বব্যাপী সবুজ বিপ্লব ঘটে। ফলে কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহ বেড়েই চলেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের ওপর এবং মানুষ প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ ও অপরিকল্পিত চাষাবাদের ফলে মাটির উর্বরতা ক্রমেই বিনষ্ট হচ্ছে।

সময় এসেছে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন জোরদার করে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টিকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার মাধ্যমে নিরাপদ ও বাসযোগ্য আগামী গড়তে সময়োপযোগী ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সবাইকে সম্মিলিতভাবে ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত