রাজনীতি যার যার অর্থনীতি সবার

অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে মানুষও বাঁচবে

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতি যার যার, অর্থনীতি সবার এই মূলমন্ত্র স্মরণ রেখে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। গত শনিবার রাজধানীতে এফবিসিসিআই’র বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উদ্দেশে প্রতিনিয়ত বলে থাকেন ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই বক্তব্য অনুস্মরণ করে দেশের সব মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় আচারাদি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছেন। এফবিসিসিআই’র সভাপতি হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে এমনি একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এটা শুধু এফবিসিসিআইর সভাপতির বক্তব্য নয়, এটা এদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। পবিত্র সংবিাধান লঙ্ঘন নিদর্লীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করছে। তারা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করায়, তাদের শরীর ও মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আগুন-সন্ত্রাসের কারণে নিরাপদে চলাফেরা করার সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে।

বিগত দিনে বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে সে সময়ে হরতালের মতো কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে যোক্তিক কারণ ও প্রেক্ষাপট ছিল। তবে এখন বিএনপি-জামায়াত যেভাবে অবরোধ কমসূচি পালন করছে, সেটা নাশকতার শামিল। একটা দেশে ১ মিনিটের জন্য নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা থাকবে না- এটা কাম্য হতে পারে না। কেননা, একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বে আর কোনো দেশে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হয় না। তাহলে বাংলাদেশ কেন পাকিস্তানের মতাদর্শে বিশ্বাসী হবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আড়াই লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। সেই দেশের রাজনৈতিক রেওয়াজ কেন আমরা অনুস্মরণ করব। বিজয়ের মাসে আমরা পাকিস্তানের ভাবধারাকে আলিঙ্গন করলে আগামী দিনের প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। পাকিস্তানের সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়ার দাবিতে অবরোধ কর্মসূচির ডাক আমাদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত করে। স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের প্রাণ। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তবে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সব ভেদাভেদ ভুলে ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

দেশের ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠুভাবে নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনা করতে চান। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ খুবই জরুরি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অসহিষ্ণু কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান বিশ্ব ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব এরইমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমাদের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য সংক্রান্ত পরিস্থিতি ও নীতিমালা ক্রমশ আধুনিকায়ন করতে হচ্ছে। দেশ পরিচালনা করবে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা। আর দেশের প্রাণশক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিযাত্রা এগিয়ে নিতে কাজ করবেন আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা। দেশ পরিচালনার জন্য অর্থ প্রয়োজন। আর এই অর্থ আসে দেশের ব্যবসায়ী ও জনগণের হাত ধরে। দেশের অর্থনীতি জোরাল হলে দেশের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। আর অর্থ তহবিল জোরাল হলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করাও সহজ হবে। জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাও সহজ হবে। সরকার পরিচালনায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাধাহীন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের মনে রাখা দরকার, দেশের অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে আর দেশ বাঁচলে দেশের মানুষও প্রশান্তির মধ্যে বসবাস করতে পারবে। আর সে কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার পথ পরিহার করতে হবে।