রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত হোক

সায়মুর রহমান

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। দেশের জনগোষ্ঠীর অন্তত ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপের কারণে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ, বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এ থেকে স্ট্রোক হতে পারে, যা থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এ রকম ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। স্ট্রোক থেকে অন্ধত্ব, শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একসময় মনে করা হতো, শুধু বয়স্ক ব্যক্তিরাই এতে আক্রান্ত হন। কিন্তু বর্তমানে এ চিত্র পাল্টেছে। অল্প বয়সিদেরও এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে তুলনামূলক শহরের মানুষ উচ্চ রক্তচাপে বেশি ভোগেন।

পুরুষের তুলনায় নারীদের এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। দেশে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগী। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবিলায় কয়েক বছর ধরে চালু রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। যার আওতায় সেবা গ্রহণ করার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছেন ৫২ শতাংশেরও বেশি রোগী। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, রোগীর সংখ্যার তুলনায় ওষুধের মজুদ কম হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ২০১৮ সাল থেকে যৌথভাবে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয়, বিনা মূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদান, চিকিৎসা ও ফলোআপ সেবা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৫৪টি উপজেলায় কাজ করছে। এই কাজে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা রিজলভ টু সেইভ লাইভস (আরটিএসএল)। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই কর্মসূচি। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ওষুধের মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এ কারণে অনেক রোগীকে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে এসে ওষুধ ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে। ওষুধ উৎপাদন, ক্রয় এবং উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে ওষুধ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে ওষুধ পাওয়ার বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মাঝেমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ওষুধ পৌঁছাতে দুই থেকে আড়াই মাস লেগে যায়। ফলে নিয়মিত ওধুষ গ্রহণে বিঘ্ন ঘটছে। উচ্চ রক্তচাপের মতো এ রকম একটি নীরব ঘাতকের ওষুধ সংকট হবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। শুধু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই কমে যাবে অনেক বড় রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার। এতে করে স্বাস্থ্য খাতেও চাপ কমবে। তাই বিনামূল্যে প্রদানের জন্য উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে পারলে উপকৃত হবেন প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক মানুষ। ওষুধের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন এ খাতে সরকারের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ফলে এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এজন্য নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ মোকাবিলায় চলমান কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সব কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সারা জীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। সুতরাং রোগী যেন সহজে ওষুধ পেতে পারেন, সে বিষয়টিও চিন্তায় রাখা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারকে বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।