নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন

সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের স্বার্থে হবে সহায়ক

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩ দিনের জন্য মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। তারা ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। সারা দেশে ৩৫ হাজারের মতো সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে। গত সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন প্রতিরক্ষা সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। তাদের মধ্যে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনার পর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পিএসও ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের জন্য কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনে মোতায়েন হবে, তাহলে অবশ্যই হবে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি, তারা যেভাবে চান, সেভাবেই আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

ইসির সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আলোচনা করে আমার মনে হয়েছে ওনারাও চাচ্ছেন একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হোক। এ বিষয়ে আমরা কমিশনকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহায়তা করব; যেন একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়।’ অতীতেও সশস্ত্র বাহিনীকে যেভাবে মোতায়েন করা হয়েছে, এবারও সেভাবে হবে বলে উল্লেখ করেন পিএসও। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি, যে ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়, সশস্ত্র বাহিনীর তরফ থেকে সেটা করা হবে। এবার যদি বেশি প্রয়োজন হয়, আমরা সেটা করব। গতবার ৩৮৮টি উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনী এবং ৮৭টি উপজেলায় বিজিবি ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে ও পরে মিলিয়ে ১০ দিন বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। নির্বাচনি এলাকাগুলোতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ এবং নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য দ্বাদশ নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ এবং সেনা মোতায়েন করার বিষয়টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে সোনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাওয়া একটা বড় স্বস্তির খবর। তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর পাশাশাশি নির্দেশনা অনুসারে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনি মাঠে সোনাবাহিনী থাকায় প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। মাঠে সেনাবাহিনী থাকলে ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, সেটি অনেকটা দূর হবে। ভোটাররা ভোটদানে উৎসাহিত হবেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সোনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশনও ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অন্তত ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ গ্রহণ করছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিগত বছরের মতো সহজে জয়লাভ করবেন, সেই সুযোগ নেই। অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ভোটারের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তিনিই নির্বাচিত হবেন। নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীকে বিজয়ী করে অনার দায়িত্ব দল নেয়নি। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। প্রতিযোগিতা করেই জয়লাভ করতে হবে। সে কারণে এবারের নির্বাচনে অনেক আসনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াই হবে। এটাই নির্বাচনের সৌন্দর্য এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে আসেনি বলে নির্বাচনে আমেজ থাকবে না এই অভিযোগ করার সুযোগ কম। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর জয়ের জন্য ভোট কেন্দ্রে যাবেন, এমনটাই প্রতাশা করছেন দেশের জনগণ।