নিশ্চিত হোক নাশকতাকারীদের শাস্তি

কে বহন করবে ক্ষতিগ্রস্তদের দায়ভার

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি- জামায়াতের অবরোধ কমসূচি পালনকালে এই প্রথম রেললাইন কেটে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত করে মানুষ হত্যার মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলো। আর এই প্রথম রেললাইন কাটার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হলো। গত বুধবার ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গ্যাসকাটার মেশিন দিয়ে প্রায় ২০ ফুট রেল ট্র্যাক কেটে ফেলা হয়। এতে নেত্রকোনা থেকে আসা ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের আটটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়।

একই দিন রাত ১০টার দিকে নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ৭২টি ফিশপ্লেট খুলে নাশকতার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার বাগডোকরা প্রধানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডোমার-চিলাহাটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ঘটনাটি টের পেয়ে সেখানে শত শত মানুষ জড়ো হন। পরে চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসছিল। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানুষ বিভিন্নভাবে সংকেত দিলে ট্রেনটি থেমে যায়। এতে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এর আগে দশম দফায় অবরোধ চলাকালে মানুষ ট্রেনকে নিরাপদ বাহন হিসেবে গ্রহণ করে। আর এ কারণে ট্রেনকে দুর্বৃত্তরা টার্গেট করে। কেন না, যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। সে কারণে মানুষ নিতান্ত প্রয়োজনে ট্রেনকে যাতায়াতের বাহন হিসেবে বেছে নেন। এখন যদি ট্রেনও দুর্বৃত্তদের আগুনসন্ত্রাসের লক্ষ্যবস্তু হয়, তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়- এ প্রশ্ন স্বাভাবিক কারণে উঠে আসে। জীবনসংগ্রামী মানুষ অবরোধ চলাকালে পরিবারিক প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়। আর দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে যদি তিনি প্রাণ হারান তবে পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। যেসব ট্রেনযাত্রী হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন ধারণের নিশ্চয়তা কে দেবে- এখন সেটাই বিবেচ্য বিষয়। কে এগিয়ে আসবে তাদের সহায়তায়। যেসব মানুষ হতাহত হয়েছে তারা রাজনীতি বুঝে না। তারা কষ্ট করে সংসার খরচের জোগান দেয়। তারা ঘরে বসে গেলে তাদের সংসার খরচ কে বহন করবে? নিরাপরাধ মানুষকে কেন হামলার টার্গেট করা হচ্ছে, সেটাও বোধগম্য নয়। যারা এ ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ হবে, তাদের কোনো প্রকার ক্ষমা করা যাবে না। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্ঠেও অনুরূপ অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি বলেছেন, যারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নাশকতা করছে, তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই। তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেছেন, ‘আমি জনগণকেও বলব, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।’ হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত চক্র গাজীপুরে রেললাইন উপড়ে ফেলার কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরো বলেন, ‘যারা মানুষ মারার জন্য রেললাইন উপড়ে ফেলে বা রেললাইন কেটে দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারার কল্পনা করে বা জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে, এদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ বলতে কিচ্ছু নেই। এটা জনগণকেই প্রতিহত করতে হবে। সেটাই আমার আহ্বান সারা দেশের মানুষের প্রতি।’ গ্যাসের সিলিন্ডারসহ, গ্যাস কাটার মেশিন দিয়ে এই রেললাইন কাটা হয়েছে। এটা কি রকম ধ্বংসাত্মক কাজ। বিএনপির সর্বশেষ দফা অবরোধ কমসূচি গত বুধবার সকালে শেষ হয়েছে। আর তার আগের রাতে ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলা হলো। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়ার পর যাত্রীসহ বাস পোড়ানো, চাল ও ধানবাহী ট্রাক, মুরগির বাচ্চাবাহী যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত হলেও সেটাকে যেভাবে উৎকণ্ঠার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করে রেললাইনে নাশকতার আশ্রয় নেয়ার ঘটনাকে মানুষ অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করছে। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য নির্বাচনের আগেও একইভাবে বাস, ট্রেন, ভূমি অফিস, ভোট কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়া হয়েছে। তবে সেই নির্বাচন প্রতিহত করা যায়নি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও প্রতিহত করা সম্ভব হবে, সেটা দৃশ্যত সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই অবস্থায় জ্বালাওপোড়াও করে দেশের অথনীতিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া দেশবিরোধী যড়যন্ত্রের শামিল। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। তখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আর তার আগে যদি এভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়, তাহলে বাংলাদেশ ফিছিয়ে যাবে।

২০১৩ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মানুষের ঘরে-দোকানে, রাস্তায়, অফিসে সর্বত্র পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যা করা হয়। চলন্ত গাড়িতে বোমা ও আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় নারী-শিশুদের। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসফেরত কর্মজীবী কেউ রক্ষা পায়নি বিএনপি-জামায়াতের বর্বরতা থেকে। আগুনে পুড়িয় বা পিটিয়ে বহু মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। আর পঙ্গু হয়ে যন্ত্রণাকাতর জীবন কাটাতে থাকেন অনেকে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন এরকম নাশকতা আর না হয়, সবাই যেনো সমাজে নিরাপদে বাঁচতে পারে, সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি সেই সময়ই উঠেছিল। তবে সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে এসব হিংসাত্মক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।