অভিমত

শীতে উৎসব নাকি আহাজারি

তামান্না ইসলাম

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিটা পশু-পাখিকে যেমন বনে মানায়, তেমনি একটি শিশুকেও মানায় তার মায়ের কোলে। পথশিশু হলেও তার আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চাদের মতোই পড়ালেখা করার, স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার আছে। অথচ আমরা আমাদের আশপাশে তাকালে দেখতে পাই পথ শিশুদের আহাজারি। শীত যতই এগিয়ে আসছে, ঘরে ঘরে পিঠা পার্বণের উৎসকথা ততই বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতে প্রতিটা বাড়ি পিঠাপুলির পার্বণে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে। কিন্তু পথের পাশের অসহায় মানুষগুলো, পথশিশুগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে শীত কতটা ভয়াবহভাবে তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। থাকার জন্য ঘর নেই, গায়ে দেওয়ার কম্বল নেই, পেটে হয়তো খাবারও থাকে না তাদের। শীতের সন্ধ্যায় বের হলে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বসে কিছু মানুষ পিঠা বিক্রি করছে অথচ খোঁজ নিলে দেখা যায়, তাদের নিজের সন্তানের মুখেই একটি পিঠাও দিতে পারে না। শীতে সবাই গরম কাপড় কিনে পরিধান করে। অথচ তাদের গরম কাপড় কিনে পরার মতো সক্ষমতা থাকে না। থাকার জন্য মাথার উপরে চাল থাকে না।

হাড় কাপা শীত সহ্য করে বাঁচতে হয় তাদের। দেখা যায় নিজেরা ঠিকমতো দুবেলা দুমুঠো খেতে দিতে পারে না- সেখানে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবে কি করে? অথচ অন্য সব বাচ্চাদের মতোই তাদেরও মনে ইচ্ছা জাগে স্কুল ড্রেস গায়ে দিয়ে স্কুলে যেতে; কিন্তু স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে যেতে হয় কাজের সন্ধানে। হয়তো কেউ চায়ের দোকানে, কেউ হয়তো স্টেশনে কাজ করছে। কেউবা আবার মাথায় তুলে নিচ্ছে পুরো সংসারের বোঝা। ঈদে নতুন জামা কেনার পরিবর্তে কিনতে হয় ঘরের চাল, ডাল ও আলু। যে চোখে স্বপ্ন দেখবে পড়া লেখা করে বড় হওয়ার সেই চোখে দেখতে হচ্ছে, কীভাবে দুমুঠো ভাতের সন্ধান পাওয়া যায়। সারা দিনই তাকে কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে। শিক্ষার অভাবে যত্নের অভাবে অবহেলায় একটি শিশু দিন দিন চুরি, ছিনতাইসহ আরো অনেক খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি তারা অল্প বয়সেই বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ জন্যই হয়তো রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘১৩ থেকে ১৪ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই’, তখন তাদের প্রতি যত্ন নিতে হবে। এই সময়টা একটি কিশোর-কিশোরির নৈতিক বিকাশের সময়। এক্ষেত্রে একটি মায়ের ভূমিকা সর্বাধিক। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেন, ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো’ তার কথাটি যথার্থ। প্রতিটি মা চায় তার সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু অভাবের তাড়নায় তা অনেক সময় পারে না। বরং তার হাতে বই এর পরিবর্তে তুলে দিতে হয় কাজের হাতিয়ার। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা একসময় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। মানুষে মানুষে সৌহার্দপূর্ণতা থাকা উচিত না হলে ইসরাইল ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য কি থাকবে? সমাজে সবাই একে অন্যের প্রতি সদয় হওয়া বাঞ্চনীয়। শীতে রাস্তার পাশ দিয়ে অনেক ঘরহীন মানুষ তার আশ্রয় খুঁজে নেই। দেখা যায়, অনেক অসচেতন মানুষ বেপরোয়াভাবে গাড়ি তাদের গায়ের উপর চালিয়ে দেই। এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। আমরা যদি উত্তরবঙ্গের কথা ভাবি, সেখানে দেখা যায় সর্বোচ্চ শীত পড়ে। এতটাই খারাপ অবস্থা হয় যে কুয়াশায় চারপাশে অন্ধকার হয়ে আসে। অনেকেই গরম কাপড় কিনিতে পারে না? আমরা নতুন কাপড় কিনে না দিতে পারলেও নিজেদের আগের কাপড়গুলো তো তাদের দিয়ে সাহায্য করতে পারি। আসলে শিক্ষার আলো যখন প্রতিটি মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করবে। দুর্নীতি কমে যাবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে না। সকলে এক হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। শিক্ষা মানুষকে সুদূরপ্রসারি হতে সাহায্য করে। যদি সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো তাদের এই অপরাধপ্রবণতা দিন দিন কমে যাবে। আমাদের সবার উচিত প্রতিটি মানুষের প্রতি যত্নশীল হওয়া। শীতে তারা যে অসহনীয় কষ্ট ভোগ করে আমরা প্রত্যেকে যদি সচেতন হয় এবং তাদের পাশে দাঁড়াই, তাহলে কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট লাঘব করা সম্ভব।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।