মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস!

অনিশ্চয়তায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নকল করে পরীক্ষায় পাস করা যতটা অনৈতিক তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি অনৈতিক কাজ হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁস করা এবং সেই ফাঁসকৃত প্রশ্ন অন্যকে দিয়ে তার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া। ওইসব শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পায় যারা মেধারী। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়ার মতো সক্ষমতা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। মেডিকেল কলেজে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অনেক লেখাপড়া করতে হয়। দীর্ঘদিনের সাধনার পর মেডিকেল কলেজে পড়ার মতো যোগ্যতা অর্জিত হয়। আর তার পরই একজন উচ্চতর মেধাবী শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। মেধাবী ছাত্ররা মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলে তারা ভালো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে। আর যদি কম মেধাবী শিক্ষার্থী ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুয়োগ পায় তারপক্ষে ওই বিশেষায়িত শিক্ষা আয়ত্বে আনা সম্ভব হয় না। অনেক অভিভাবক রয়েছেন, তারা অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক তারা সন্তানের আয়ের ওপর নির্ভর করেন না। অথচ তারা তাদের সন্তানদের চিকিৎসক বানাতে চান যে কোনো মূল্যে। তারা নিজেরাও জানেন তাদের সন্তানকে দিয়ে স্বাভাবিক বৈধপথে মেডিকেল কলেজে পড়ানো সম্ভব নয়। অথচ সামাজিক প্রতিপত্তি ও সুনামের জন্য মেডিকেল কলেজে পড়াতে হবে, সন্তানকে ডাক্তার বানাতে হবে। সেই মনোবাসনা পূরণ করতে গিয়ে নিজেরাই ভর্তি পরীক্ষার ফাঁসকৃত প্রশ্ন খোঁজেন। অনেক সময় পেয়েও যান। সন্তান মনের আনন্দে ফাঁসকৃত প্রশ্নের উত্তর খাতায় লিখে পাস করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে অযোগ্য সন্তানকে দিয়ে ওই যোগ্য কাজ করানোর পরিণতি খুবই কঠিন। কেননা সন্তানটি মেডিকেলের পড়া রপ্ত করতে না পেরে কিংবা বার বার পরীক্ষায় ফেল করে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। ফলে তার জীবন হয়ে ওঠে বিপন্ন। একজন শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন করার জন্য তার অভিভাবকের এই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কম দায়ী নয়। বুধবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আবার মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রসঙ্গ সামনে উঠে এলো। গ্রেপ্তারদের মধ্যে আছেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেডিকেল কোচিংয়ের পরিচালক ও ৫ চিকিৎসক। এর আগের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি একটি স্বস্থির খবর। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে সমাজে তাদের একটা সামাজিক অবস্থানও রয়েছে। সমাজের এই অবস্থানে থেকে তাদের এ ধরনের অনাচার করার কথা নয়। অথচ তারা তা করেছে নিতান্ত লোভে পড়ে। যারা মেডিকেলে ভতি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করার কাজে জড়িত তারা একটা বিরাট নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এই অপরাধী চক্র ভেঙে দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে তাদের পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের সহযোগীরা আইনের ফাক-ফোঁকর কাজে লাগিয়ে তাদের জামিনে মুক্ত করে আনে। তারা সাজেশন আকারে প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেন। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে অনেকে কোনো না কোনো ভতি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। তারা তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের লোভ সামলাতে পারেন না। তারা একেকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। এই টাকা দিয়ে তারা গাড়ি-বাড়ি করেন। তাদের সন্তানদের বিদেশে পড়ান। বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কোনো কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং করে কতজন মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে সেই সুনাম অর্জন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালকরা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার কাজে অনেক কোচিং সেন্টার নৈপথ্যে কাজ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর সে কারণে পাবলিক পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয় সরকারি সিদ্ধান্তে। ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা গেলেও সেই শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে গিয়ে মানুষ বার বার বিড়ম্বনায় পড়ে। সে কারণে এই ধরনের অপতৎপরতা পরিহার করাই উত্তম।