দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজ চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রতীক নিয়েই প্রার্থীরা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের আগে প্রচারণার কৌশল হিসেবে প্রার্থীর সমর্থকরা মাইক ব্যবহার করে থাকেন। তবে দিনে-রাতের কখন কীভাবে মাইক ব্যবহার করা হবে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন এলেই মাইকের অসহ্য শব্দদূষণে বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিক, শিশু ও রোগীদের জীবন অতীষ্ট হয়ে উঠে। শব্দদূষণ রোধে যে বিদ্যমান আইন রয়েছে, তার সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণার ক্ষেত্রে শব্দদূষণ-সংক্রান্ত নির্বাচন বিধি কঠোরভাবে মেনে চলার তাগিদ রয়েছে জনগণের পক্ষ থেকে। শব্দদূষণ রোধে বিদ্যমান কঠোর বিধিমালা থাকলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে যন্ত্রণায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। খোদ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার আশপাশে বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র চললেও নীরবে সহ্য করে নিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
ভুক্তভোগীরা এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন। পাশাপাশি আইন-বিধিমালা সম্পর্কেও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পূর্ণ ধারণা নেই বলেও তারা মনে করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত শব্দদূষণ শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায় এবং বিশ্লেষণক্ষমতা কমে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব নয়েজ কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, স্নায়ুর সমস্যা, আলসার, মাথাব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, আত্মহত্যার প্রবণতা, হৃদরাগের মতো জটিল রোগের কারণ হতে পারে উচ্চমাত্রার শব্দ। এমনকি মাতৃগর্ভে থাকা শিশুরও জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার দিনের বেলার শব্দের সহনীয় মান ৫৫ ডেসিবল। আর রাতের বেলা ৪৫। অথচ এর চেয়ে কয়েক গুণ উচ্চমাত্রার শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে নগরবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ‘ইটভাঙার মেশিনের শব্দ সহনীয় মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুণ, অর্থাৎ ৪৫০ ডেসিবল।’ অথচ এই শব্দ সঙ্গে নিয়ে থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। শিশুরা দুই কান চেপে ধরে সময় কাটায়। রাস্তা দিয়ে হাটাচলার সময় মানুষ উচ্চশব্দে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে থাকে থাকে। এভাবে অভিযোগের প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই সাধারণ মানুষ অভিযোগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণে ব্যবস্থা নেয়, এটা সাধারণ মানুষ জানেও না। নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিধিমালায় বলা আছে, ‘আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে উক্ত এলাকায় নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মিকচার মেশিনসহ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি চালানো যাবে না। ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ও মিকচার মেশিন ছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি এলাকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্মতি নিয়ে সময় নির্ধারণপূর্বক নীরব এলাকায় নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা বা চালানো যাবে।’ সে হিসেবে আবাসিক এলাকায় কোনোভাবেই ইট ভাঙার মেশিন চালানোর সুযোগ নেই। বিধিমালায় বলা আছে, বিধি লঙ্ঘনকারীকে লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, আইন এবং এই বিধিমালার বিধানাবলি সাপেক্ষে মৌখিক বা লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবেন এবং নির্দেশ পালনে যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী বা বিধান লঙ্ঘনকারী বাধ্য থাকিবেন। ২০০৬-এর বিধিমালার ধারা ১৭ অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা অতিক্রম করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেকোনো সময়ে যেকোনো ভবন বা স্থানে প্রবেশ করে অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আটক করতে পারবেন এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে প্রথম অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন এবং পুনরায় একই অপরাধ করলে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। নিজ দায়িত্বে তারা যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেটাই কামনা করে এলাকাবাসী।