শীতের আমেজে নির্বাচনি প্রচারণা

পর্যালোচনা করা হোক ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারণা। শীতের আমেজে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ২ হাজার ৭১৬ জন। বাছাইয়ে বাতিল হয় ৭৩১ প্রার্থী। আপিল দায়ের করা হয় ৫৬০টি; মঞ্জুর হয় ২৮৬টি। আপিল নামঞ্জুর হয় ২৭৪টি। গত রোববার সারা দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৭টি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ২৭টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে এখন মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ জন। আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রচার শেষ হবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারের সময় পাচ্ছেন ১৯ দিন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও একই সময় দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। প্রতীক নিয়েই প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। তবে যারা এবার ভোট বর্জন করেছে, তাদের জানা উচিত ছিল দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। তারা নির্বাচনকে একটা উৎসব হিসেবে মনে করে। দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়া দরকার। যেসব রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তারা কেন নেয়নি এবং নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কারণে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পর্যায়ে দাঁড়াবে সেটা পর্যালোচনা করা দরকার। এবারের নির্বাচনের সময়টা ভোটের জন্য বেশ অনুকুলে। কেন না, ঝড়বৃষ্টি নেই। শীতের আমেজে ভোট প্রার্থনা করার মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করবে। বিএনপি এই নির্বাচন কেবল বর্জনই করেনি। নির্বাচন প্রতিহত করারও হুমকি দিয়েছে। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা একটি সাক্ষাৎকারে এই বলে মন্তব্য করেছেন যে, সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না। এর আগে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে গিয়ে সাতটি আসন পেলেও পরবর্তীতে পদত্যাগ করে রাজপথের বিরোধীদলে নাম লেখায়। তারপর থেকে দলটি রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা হরতাল-অবরোধের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক কমসূচি পালন করে আসছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপি। দেশের বাইরের শক্তিও তাদের দাবির সমর্থনে পাশে দাঁড়ায়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সুযোগ এই সরকার পাবেনা বলে বিএনপির পক্ষ থেকে এর আগে বলা হলেও তাদের সেই বক্তব্য হালে পানি পায়নি। নির্বাচনি ট্রেন এখন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগের স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছে। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে কতটা লাভবান হয়েছে, সেটা নিয়ে দলের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। এই পর্যালোচনা আগামী দিনের রাজনীতির জন্য দলটিকে একটা দিকনির্দেশনা দেবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি কোনো আদর্শিক দল নয়। মাটি ও মানুষ থেকে এই দলটির জন্ম হয়নি। সেনাছাউনি থেকে যে রাজনৈতিক দল গঠিত হয় সেই দলের শিকড় থাকে আলগা। এমন দলের নেতারা নিজ দলের প্রতি অবিচল থাকে না। তারা দলকে নিজের বলে আপন করে নিতে পারে না। আর সেই কারণে বিএনপির বড় বড় নেতা দীর্ঘদিন নিরস্ত্রীয় এবং জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ না পেয়ে তারা এখন অন্য নামে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সে কারণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে আরকটি ভুল সিদ্ধান্ত নিল কি না, সেটা নিয়েও তাদের ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বের কোনো ধরনের চাপ নেই। তারা শুধু জানতে চায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী কাজ করা হচ্ছে। ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও কেউ কোনো ধরনের নাশকতা করতে চাইলে, তারা ধরা পড়ে যাবে; কেন না এখন প্রযুক্তির যুগ। কেউ যদি নাশকতা করার পর মনে করেন বেঁচে যেতে পারবেন, সেটা এখন আর সম্ভব নয়।’ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে- শান্তি ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট হবে। ভোটারের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দ্বাদশ নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকাণ্ড চালাবে- এমনটা ধরে নিয়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অধিকতর তৎপরত হলে নাশকতা করা কঠিন হবে। জনগণের মধ্যে এখন সচেতনতা বেড়েছে। তারা নাশকতাকারীদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। তার পরও নাশকতাকারীরা অভিনব পন্থায় রেললাইনের মতো স্পর্শকাতর অবকাঠামা কেটে ফেলে মানুষকে মৃত্যু মুখে ঢেলে দিচ্ছে। কারা এমনি নাশকতামূলক কাজ করছে, সেটি আজ হোক কিংবা কাল হোক চিহ্নিত হবে। তারা আইনের আওতায় অসবে। নির্বাচনে অংশ না নেয়া, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া কোনো ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব ব্যাপার তবে; তিনি তো নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেন না। সেই অধিকার কারো নেই।