বেকারমুক্ত দেশ কবে হবে?

আজহার মাহমুদ

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। সবচেয়ে বেশি অবাক হই তখন, যখন দেখা যায় আমাদের দেশে বেকার তারাই যারা শিক্ষিত। অর্থাৎ আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অত্যধিক। যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে প্রতিটি সরকার কাজ করেছেন বলা যায়। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলল। এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশ টানা ১৫ বছর পার করেছে। তাদেরও বেশ অর্জন রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন যদি দেখতে হয় সেটা অবশ্যই অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তাদের এই উন্নয়ন নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। এটা নিয়ে গর্ব করাও যায়। তবে বেকারত্ব নিয়ে ঠিক সেভাবে সফলতার সার্টিফিকেট পাবে না বর্তমান সরকার। সরকারের পদক্ষেপ যে ছিল না তা কিন্তু নয়। বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের এই বেকার সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। বাংলাদেশে যে পরিমাণ বেকার ছেলে-মেয়ে রয়েছে সে পরিমাণ এখনো কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। এটি আমাদের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্ব দূর করতে হলে সর্বপ্রথমে পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে তারা চলে যাচ্ছে ধ্বংসের পথে। তাদের এই ধ্বংসের পথ থেকে সরিয়ে আনার জন্য অবশ্যই বেকারত্ব দূর করতে হবে। অনেকে পেটের জন্য অবৈধ পথ বেছে নিতে কোনো প্রকার চিন্তা করছে না। কেউ মাদক, কেউ ইয়াবা সহ নানান রকমের নেশায় জড়িয়ে পরছে। হতাশায় নিজেদের জীবনকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে অনেকে। তাই এখন বলা হয়, বেকারত্বই সব ধ্বংসের মূল। বর্তমান সরকার এই বেকারত্ব দূর কারর লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে দিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেখানেও এখন চলছে এক প্রকার দুর্নীতি। দুর্নীতি নেই কোথায়? প্রশিক্ষণে দুর্নীতি, ভর্তিতে দুর্নীতি, চাকরিতে দুর্নীতি, চাকরির পরীক্ষায়ও দুর্নীতি। যেখানেই যাবেন দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে আজকাল কোনো চাকরি মিলে না গরিব বেকারদের। স্বজনপ্রীতি আর টাকায় এখন চাকরি পাওয়া যায়। বাবা, চাচা, মামা, খালু না থাকলে আজকাল চাকরি তো দূরের কথা চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। আর এটাই বাস্তবতা। বেকারত্ব দূর করতে সরকারের চেষ্টা থাকলেও সেখানেও আছে প্রশ্ন। আমাদের কোনো এক মন্ত্রী অনেক ভাইরাল তরুণদের চাকরি দিয়ে একইসঙ্গে প্রসংশিত এবং নিন্দত হয়েছে। সার্টিফিকেট পোড়ালেই মিলেছে চাকরি। আবার অনেকেই কান্না করে ভাইরাল হয়েও চাকরি পেয়েছে। কিন্তু শতকরা এক শতাংশ ভাইরাল হয়ে চাকরি পেলেও বাকি ৯৯ শতাংশ শিক্ষিত বেকারের জন্য কি হচ্ছে? তারা কি এসব করতে পারছে না বলে চাকরি পাবে না? আমার প্রশ্ন হচ্ছে যাদের মন্ত্রী সাহেব চাকরি দিয়েছেন তাদের বেলায় মন্ত্রী সাহেবের মানবিতা থাকলে বাকিদের বেলায় কেন থাকবে না? তারা কি মন্ত্রী সাহেব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি এটাই অপরাধ? যা-ই হোক মন্ত্রী সাহেব তবুও চেষ্টা করেছেন। সরকারও চেষ্টা করেছেন, এটা বলতেই হয়। তবে চেষ্টা নেই বিত্তবানদের। যাদের আছে তারা যেন আরও বেশি চায়। সংবাদপত্রের তথ্যমতে, মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হতে আছে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ। তাহলে বাকি ৯৯ শতাংশের হাতে থাকে আর অর্ধেক সম্পদ। তাই এই ১ শতাংশ লোকেরাই বেকারত্বমুক্ত থাকে। আর যত বেকার রয়েছে তারা এই ৯৯ শতাংশ মানুষের ভেতরেই আছে। তাহলে বেকারত্বে সংখ্যা কমবে কীভাবে! আর এই প্রভাব পুরোটাই পড়েছে বাংলাদেশের উপর। বাংলাদেশের যেসব সম্পদ রয়েছে তার সিংহভাগ রয়েছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র সংখ্যক মানুষের কাছে। তারা চাইলেই বাংলাদেশের মানুষকে বেকারত্বমুক্ত করতে পারবে। কিন্তু তাদের সেই ভূমিকা বাংলার মানুষ দেখছে না। আমাদের দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে চাকরি না পাওয়া। পড়ালেখা শেষ করে যদি একজন শিক্ষিত ছেলে তার যোগ্যতানুসারে একটি চাকরি না পায়, তবে সে ছেলেটি দেশের জন্য বোঝা হবে তো বটেই অনেক সময় দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়েও দাঁড়াবে। আর এই বেকার ছেলেদের ধ্বংসের পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের দেশে কিছু মন্দ ব্যক্তি রয়েছে। এভাবেই ধ্বংসের পথে চলে যায় বেকর যুবসমাজ। আর এই যুব সমাজকে বাঁচতে এগিয়ে আসতে হবে সবার। দেশের প্রতিটি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে বেকার যুবকদের। এই বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের সবার এক হতে হবে। সরকার এবং দেশের বিত্তবানদের এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশের যুবকদের ভেতর রয়েছে অনেক দক্ষ দক্ষ যুবক। যাদের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন আরো বৃদ্ধি পাবে। যাদের মেধা দিয়ে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে পরবে সরকার। কিন্তু আজ তারা অবহেলিত। তারা পচ্ছে না কোনো চাকরি। মেটাতে পারছে না পরিবারের চাহিদা। আসলে এর জন্য আমাদের সমাজও কম দায়ী নয়। কোনো এক গবেষক বলেছেন, একজন ব্যক্তি যখন কোনো কর্মহীনভাবে থাকে তখন নাকি তার মাথায় খারাপ চিন্তা আসে। আসলেই কথাটি সত্য। আর এই কর্মহীন ব্যক্তিরাই সমাজের ক্ষতি করছে। যার কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। আমরা কী কখনো একজন চোর কিংবা ডাকাতের জীবন কাহীনি শুনেছি? আসলে আমরা সবসময় বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন কাহীনি শুনতে অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা জানি না একজন সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গি কেন এই পথে পা বাড়িয়েছে। কেনো নিজেদের অন্ধকার পথে নিয়ে এসেছে। এর অন্যতম একটি কারণ বেকারত্ব। তাই সরকারের উচিত এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা। আগামীর নির্বচনে যেই দলই ক্ষমতায় আসুক অবশ্যই বেকার সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা রাখছি। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, তবেই বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা কমবে।