ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মূল্যস্ফীতি কমে আসার স্বস্তিকর খবর

লক্ষ্য অর্জনে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হোক
মূল্যস্ফীতি কমে আসার স্বস্তিকর খবর

বর্তমানে দেশের অন্যতম সমস্যা মূল্যস্ফীতি। ফলে স্বল্প আয় দিয়ে সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। তবে সামনের মাসগুলোতে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থটি বলেছে, নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও গত জুলাই থেকে অক্টোবর- এ সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ২ অঙ্কের খুব কাছাকাছি ছিল। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর বিষয়ে উদ্যোগ, খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে আসার ফলে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এডিবির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ডিসেম্বর-২০২৩’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার কত হবে পারে, সে বিষয়ে এই প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। মূল্যস্ফীতির হার যাতে কমে আসার ধারা অব্যাহত থাকে আর সেজন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটা নেয়ার দাবি থাকবে দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। কেন না, মানুষের আয় বাড়েনি, অথচ নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। বেশি অর্থ ব্যয় করে কম পণ্য কিনতে এট্ াকেউ চায়না। বরং মানুষ অল্প অর্থ ব্যয় করে বেশি পণ্য কিনবে- এটাই স্বাভাবিক। কোনো পণ্যের দাম যখন বাড়ে, তখন মানুষ ওই পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দেয়। আবার যখন দাম কমে যায়, তখন মানুষ বেশি পরিমাণে কিনে বেশি পরিমাণে ভোগ করে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আর্থিক খাতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়, সেটা জনগণের কল্যাণের স্বার্থেই নেয়া উচিত। মানুষের বেশি কেনার সামর্থ্য থাকলে মানুষ সুষম খাদ্যোর প্রতি নজর দেবে এবং দেশে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে আসবে। কৈশরে পুষ্টি নিশ্চিত করা না গেলে একটি সুস্থ-সবল জাতি গঠন হবে না। সুস্থ শরীর ও সুস্থ মনের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। আর পুষ্টিকর খাবার তখনই নিশ্চিত হবে যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সাধ্যের মধ্যে আসবে। এর আগে গত এপ্রিলে প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার চলতি অর্থবছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওই পূর্বাভাসই বহাল রাখে এডিবি। টানা বেশ কয়েক মাস ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। গত জুন থেকে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। এমন প্রবণতায় সম্প্রতি এর লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন এনেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে তা এখন ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইছে সরকার। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি হতে পারে পারে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে একই পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। এ অঞ্চলের পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ও নেপালে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে এশিয়া অঞ্চলের মূল্যস্ফীতির পূর্বার্ভাস আগের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ, কাজাখস্থান, মিয়ানমার ও কোরিয়ায় আশঙ্কার চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে। এদিকে, প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হতে পারে, তা বলা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, রপ্তানি ও উৎপাদনে মাঝারি প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং রপ্তানি বাজারগুলোতে অর্থনীতির ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ঝুকিও এর কারণ হতে পারে বলে মনে করছে এডিবি। এর আগে গত এপ্রিলে প্রকাশিত এডিবির প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরেও এই পূর্বাভাস বহাল রাখে এডিবি। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও সংশোধন করেছে সরকার। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। জাতি প্রত্যাশা থাকবে প্রবৃদ্ধির এই কাঙ্ক্ষিত মাত্রা অর্জিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত