ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেন আমি এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী

বিল গেটস
কেন আমি এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী

এ বছর প্রথমবারের মতো আমার কাজের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছি। আমি বিশ্বাস করি, অনেকেই আমার সঙ্গে একমত হবেন যে আমরা এখন একটা বিশাল প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটা একাধারে উত্তেজনাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর সময়। এআই সামনের দিনগুলোতে কেমন রূপ নেবে, তা একদমই অনিশ্চিত। তবে একটা বিষয় আগের চেয়ে পরিষ্কার যে, এআই ভবিষ্যতে আমাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্টিভিটি ছাড়াও অজানা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। আমি সর্বদা একটা নীতিতে বিশ্বাস করি- উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। এজন্য আমি মাইক্রোসফট শুরু করেছি। এ কারণেই মেলিন্ডা ও আমি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গেটস ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছি। আর এ কারণেই গত শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার মান কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে বলে আমার ধারণা। ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বে পাঁচ বছর বয়সের আগেই মারা যাওয়া শিশুদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। উদ্ভাবন এই সাফল্যের পেছনে বড় একটা কারণ। বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন তৈরির নতুন নতুন উপায় নিয়ে এসেছেন, যা আগের চেয়ে অনেক দ্রুত, সস্তা এবং নিরাপদও বটে। তারা বিভিন্ন ধরনের ডেলিভারি মেকানিজম তৈরি করেছেন, যার কল্যাণে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম জায়গাগুলোতেও ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এর ফলে আরো বেশি বাচ্চাদের কাছে জরুরি সরবরাহ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তারা নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা শিশুদের রোটাভাইরাসের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করছে। আমাদের এই বিশ্বে সম্পদ বেশ সীমিত। এমতাবস্থায় আমাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ব্যয়কৃত প্রতিটি ডলার থেকে সর্বাধিক লাভের চাবিকাঠি হলো উদ্ভাবন। এই মুহূর্তে এআই এমন গতিতে নতুন আবিষ্কারের হারকে ত্বরান্বিত করে চলেছে, যা আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলোর মধ্যে একটা হলো নতুন ওষুধ তৈরি করা। এআই প্রযুক্তি ওষুধ আবিষ্কারের প্রক্রিয়ার গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং কিছু কোম্পানি এরইমধ্যে এই প্রযুক্তির সাহায্যে ক্যান্সারের ওষুধ নিয়ে কাজ করছে। গেটস ফাউন্ডেশন এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার মতো স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবিলার জন্য কাজ করছে। আমার ধারণা, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এআই বিপুল সম্ভাবনা বয়ে আনবে। আমি সম্প্রতি সেনেগাল ভ্রমণের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেশ কয়েক জন উদ্ভাবকের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের লোকদের উপকার করার উদ্দেশ্যে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগ কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে আশা করা যায়, চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই তারা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন। তারা কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন, তা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না। আমি যে দলগুলোর সঙ্গে দেখা করেছি, তারা গবেষণা করছে এআই কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে, মানুষ কীভাবে তাদের এইচআইভির ঝুঁকি আরো ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে চিকিৎসা তথ্য কীভাবে আরো সহজলভ্য করে তোলা সম্ভব। উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্ভাবকেরা যেভাবে তাদের দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন, তা দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। ভারতে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী সন্তান প্রসবের সময় বা গর্ভাবস্থায় মারা যান। ভারতের একটা দল এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের চেষ্টা করছে। ‘এআরএমএমএএন’-এর বৃহৎ ভাষার মডেল একদিন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের চিকিৎসা করা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সহ-পাইলট হিসেবে কাজ করবে। এটা ইংরেজি ও তেলেগু উভয় ভাষাতেই ব্যবহার করা যেতে পারে। এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটার ইউজার ইন্টারফেস এতটাই সহজ যে, কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই যে কেউ এটা ব্যবহার করতে পারবে। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের সামনে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন : গুণমান ঠিক রেখে কীভাবে এই প্রযুক্তি বৃহৎ সংখ্যায় উৎপাদন করা সম্ভব এবং কীভাবে সেগুলো সময়ের সঙ্গে আপডেট করা যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত গবেষণা ও তহবিল প্রয়োজন। এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমাদের এআই থেকে উদ্ভূত কিছু বিস্তৃত ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে কীভাবে পক্ষপাত ও হ্যালুসিনেশন প্রতিরোধ করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত