ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

পড়ার অভ্যাস প্রশ্ন করা শেখায়

রাজু আহমেদ
পড়ার অভ্যাস প্রশ্ন করা শেখায়

কী পড়েন? বড় বড় লেখকেরও কিছু কিছু আবর্জনা থাকে! ছোট ছোট লেখকেরও কিছু কিছু বিশালতা থাকে! ব্যস্ততার অলিগলি পার হয়ে যেটুকু পাঠের সময় সেটুকুতে আবর্জনা তলাবেন না! পড়ার ব্যাপারে সিলেক্টিভ হতেই হবে! অল্প আয়ুতে কয়েকখানা ভালো কেতাবের সাথে পরিচয় হোক! জীবনের মোড় ঘোরানোর জন্য, মস্তিষ্কের সুস্থ চিন্তা ও বিকাশের জন্য দুয়েকখানা কেতাবই যথেষ্ট! আবর্জনা গিললে বদহজম হবে। আপনার বয়স কত? অল্প কিংবা বেশি- কিছুই আসে যায় না! আপনার পড়ার মতো বহু রসদ আছে! মনকে খোরাক দেয়ার যোগ্য কেতাবের কমতি নাই। অযথা অর্থহীন আড্ডায় না মজে দুই লাইন পড়ুন। অল্প একটু আলোর সন্ধান পাবেন। অধিক পড়ুন। নিজের অজ্ঞানতা প্রবলভাবে প্রকাশ পাবে। ষাট বছরের এক জীবনে যদি অন্তত ছয়শ’খানা কেতাব না পড়া হয় তবুও মৃত্যু আসবে- সেটা ভালো জীবনের ছায়া রাখবে না। পূর্ণ আলোতে কখনোই ডাকবে না। না পড়ে কেউ বিশেষজ্ঞ হতে পারেনি! স্মরণীয় তো নয়-ই! পড়তে হবে, শুনতে হবে আরও বেশি। বলতে হবে সবচেয়ে কম! আমরা এমনিতেই খুব কম পড়ি। এই অল্পের গণ্ডিতে ভণ্ড কিছু ঢুকে গেলে রুচি নষ্ট হবে, স্বাদ বিনষ্ট হবে। জোর করে কিছু পড়লে তা মস্তিষ্কে জায়গা নেবে না। চিত্ততে আলোড়ন তুলবে না। পড়তে হবে ভালোবেসে। জমিনে একচাষ দিয়ে গেলে আগাছা দমন হয় না, বীজ রোপণের জন্য মাঠ প্রস্তুত হয় না। এক বই দুই-পাঁচবার পড়তে হবে। দাগ টানতে হবে। নোট রাখতে হবে। সারা মাঠ খুবলিয়ে লাভ নাই! চাষাবাদের যোগ্যটুকু সম্পূর্ণ প্রস্তুত হোক-সেটা অল্প হলেও গোছালো হোক। প্রতিদিন অন্তত ৫০ পৃষ্ঠা পড়া উচিত। গতকালের আমির থেকে আজকের আমিকে আলাদা করতে পাঠের বিকল্প নাই। ভালো শিক্ষক হতে হলে, দক্ষ লেখক হতে হলে, ভালো কথক হতে হলে ক্লাসিক সাহিত্যের খোঁজ রাখতে হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখ ডুবিয়ে রাখতে হবে। রাতের পর রাত বইয়ের পৃষ্ঠার সাথে কথা বলতে জাগতে হবে। পাঠাভ্যাস মরে যাচ্ছে। যা পড়তে ভালো লাগে সেটা পড়েই ইচ্ছাকে বাঁচিয়ে রাখুন। ফিকশন-উপন্যাস কিংবা কবিতা, যা ইচ্ছা তাই পড়ুন। রুচি নষ্ট হয়, মিথ্যা যুক্তি শক্ত হয় এমন কিছু থেকে বিরত থেকে বিরুদ্ধমতও পড়ুন। পড়লেন তো আপনি বদলালেন। এই সমাজের জন্য বদলানো মানুষ দরকার। যে মানুষের সাথে বইয়ের সম্পর্ক আছে সে মানুষ পাপ করতে পারে না। অন্যায় সইতে পারে না। বহুমাত্রিক দৃষ্টির জন্য পড়তে হবে। নতুন কিছু সৃষ্টির জন্যও পড়তে হবে। যে পড়ে এবং যে পড়ে না- তারা সমান নয়! লাইনে লাইনে অতীত লুকিয়ে আছে, ভবিষ্যতের কথা আছে-বর্তমানে দাঁড়িয়ে সব জানতে বইয়ের দিকে ফিরতে হবে। সব দুঃখ ভুলতে, সব ব্যথা মুছতে, মনের মধ্যে নতুন ভুবন সৃষ্টির স্বার্থে বেশি বেশি পড়তে হবে। পড়ার অভ্যাস প্রশ্ন করা শেখায়। উচিত-অনুচিত জানায়। ঘরে ঘরে লাইব্রেরি না থাকলে সততা জাগবে না, মানবতা টিকবে না কিংবা দেশপ্রেম সৃষ্টি হবে না। বই নির্দেশনা দেয়। সকালে-রাতে বইয়ের সাথে দেখা না হলে মস্তিষ্ক বিদ্রোহ করে, সে অসুস্থ হয়। শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন ব্যায়াম দরকারি তেমনি মানসিক সুস্থতার জন্য বইয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন জরুরি। অ-পড়ুয়া প্রজন্ম নিয়ে স্বপ্ন পূরণ হবে না। অ-পড়ুয়া সত্ত্বা বিবেক জাগাবে না। পড়ুন, পড়ুন এবং পড়ুন। ভালো লেখা পড়ুন। শক্তিশালী লেখার প্রেমে মজুন। তবেই জীবনের সৌন্দর্য খুঁজবেন, রুচির দুর্ভিক্ষ বুঝবেন। পার্থক্য করতে পারবেন শুভ-অশুভের! পাঠহীন জীবন অনর্থক যাত্রা। জীবনকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাতে বইয়ের সাথে সন্ধি পাতাতেই হবে! না পড়ে কেউ জ্ঞানী হতে পারেনি, না জেনে কেউ মান্যবর হয়নি। লিখতে হলেও পড়তে হবে, বলতে হলেও পড়তে হবে। পড়াশুনা করে কথা বললে সে বলায় দর্শক-শ্রোতা মুগ্ধ হবে! এলোপাতাড়ি বলে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত