অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে অবরোধ

কোন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে আজ আবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোন কর্মসূচি পালন করবেন, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের কোনো নমুনা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। আন্দোলনকারী দলগুলোর দাবি না মেনে ইতিমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে আন্দোলন জোরাল করতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। তবে তাদের কোনো আন্দোলন হালে পানি পাচ্ছে না। এরই মধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে দলটি। আজ আবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারা। দাবি আদায়ের আন্দোলনে হরতাল-অবরোধে সাড়া না মিললেও অসহযোগ কর্মসূচি কতটা সফলতা পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর বিএনপি, সিপিবি এবং বাসদসহ ১৪টি দল ভোটে যায়নি। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচন করছে। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল নির্বাচন বর্জন করলেও দশম সংসদ নির্বাচনে ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। টানা আন্দোলনের পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করে এবার ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির কেন্দ্র ও তৃণমূল পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। দলটির কেন্দ্র আশাবাদী হলেও পুলিশি তৎপরতা আর দলের নেতারা মাঠে না থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সরকারকে ‘অসহযোগিতা’ করার আহ্বান জানানোর পর দলটির নেতাকর্মীরা এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এর আগে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ এবং চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রথমইে গ্রেপ্তার হন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর প্রথম সারির কয়েকজন নেতাসহ এরই মধ্যে প্রায় ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। দলটি দুই একদিন বিরতি দিয়ে ৫৩ দিন হরতাল-অবরোধ থাকলেও তা পালিত হয়েছে ঢিলেঢালাভাবে। ব্যাপক পুলিশি তৎপরতায় দল বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতা তাদের কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কর্মসূচি বেশিরভাগ স্থানে পালিত হয়নি। বিশেষ করে রাজধানীতে কর্মসূচি পালনে ঝটিকা মিছিল ছিল বিএনপির যেন ভরসা। অবশ্য দলটির সমমনা কয়েকটি ছোট দল বো জোট প্রেসক্লাব-পল্টন এলাকায় নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে। চলমান পরিস্থিতির মধ্যেই গত বুধবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকারও অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারকে সব প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং ব্যাংকগুলো সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় ব্যাংকে লেনদেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্তরা মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা আসার পর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, যাদের ইউটিলিটি বিল বকেয়া রয়েছে, তা যেন অবিলম্বে আদায় করা হয়। অন্যথায় সংযোগ যেন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি সত্যিই ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা বন্ধ করে, তাহলে তাদের সংযোগ কেটে দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষ হয়তো ভেবে দেখবে। তাহলে আরেকটি বিশৃঙ্খলাময় পরিস্থিতি তৈরি হবে। বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে, তারা কর্মসূচি ডাকে অথচ কর্মসূচির বৈশিষ্ট্য কী, তা তারা জানে না। আর কর্মসূচি পালন করার মতো সক্ষমতা তাদের আছে কি না, সেটাও তারা ভাবে না।

ফলে তাদের কর্মসূচি গুরুত্ব হারায়। তবে আতংকের বিষয় হচ্ছে অবরোধ-হরতালের আগের দিন কারা যেন যানবাহনে আগুন দেয়। আগুন দেয়ার এই ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারলে মানুষ স্বস্তির সঙ্গে যাতায়াত করতে পারত।