প্রচারণায় ট্রাফিক আইন অমান্য

আরিফ আনজুম

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে চলছে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। সারাদেশে একযোগ মার্কা বের হওয়ার পর আরো জোর তাগিদে চলছে প্রচারণার পাশাপাশি পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং ও শোডাউনে সারা দেশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ উৎসবে যেমন শামিল হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা, তেমনি দেশের সাধারণ নাগরিকরাও। প্রায় রাস্তায় লক্ষ করা যাচ্ছে, হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের শোডাউন চলছে সর্বত্র। ইশতেহারের বাস্তবায়ন নেই প্রার্থীদের আচরণেই। নেই সমাজকে সতেজ রাখার কোনো ভাবনার বালাই। গত বছরে দেশের সড়ক নিরাপদ করার দাবিতে দেশজুড়ে হয়ে গেল কিশোরদের একধরনের বিক্ষোভ, যাকে অনেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আবার অনেকে কিশোর বিক্ষোভ আখ্যা দিয়েছেন। কিশোর-বিক্ষোভের কিছুটা হলেও অবশ্য অসজাগ ব্যক্তিরা রাস্তায় চলাচলের বিষয়ে কিছুটা সচেতনতা উপলব্ধি করে ফেলেছে। কিশোরদের এ আন্দোলনের পর দেশের সড়ক ব্যবস্থায় কিছুটা হলেও একটু আধটু পরিবর্তন এসেছে। আমাদের যুগোপযোগী হয়ে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন। জোরালো হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন মোটরসাইকেল আরোহীর হেলমেট ব্যবহারের আইন বাস্তবায়ন। এ আন্দোলনের পর আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা তৈরিতে প্রশাসনের নানা তৎপরতায় মোটরসাইকেল আরোহীরা সাবধান হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা অনেক অংশে কমিয়েও গেছে। সবচেয়ে বড়ই উপকৃতের বিষয় এখন আর রাজধানীসহ দেশের সড়কে দেখা মেলে না হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীদের। লাইসেন্সবিহীন চালকেরও দেখা মেলে না খুব একটা। কিন্তু নির্বাচনের সময় দেখা মেলে অহরহ এই পুরানো স্মৃতিময় বাংলার সড়কে সড়কে হাজার মোটরবাইক চালকের চিত্র। নির্বাচনির পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং ও শোডাউনে সারা দেশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ আর সেই সঙ্গে রয়েছে বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর রেকর্ড। যারা নির্বাচনি প্রার্থী হয়েছে তারা যদি তাদের সমর্থকদের বলে দেয় যে, হেলমেটবিহীন শোডাউন থেকে শুরু করে নির্বাচনি সব কার্যক্রমে কোনো রকম অংশ নেওয়া যাবে না। তাহলে আশা করা যায়, শতভাগ এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার আশা করা যায়। সঙ্গত সম্মতিক্রমে বলা যায় যে, শুধু আইনের পরিবর্তন বা কঠোর বাস্তবায়নই নয়, আরো একটি অর্জন এসেছে কিশোরদের গত বছরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিক্ষোভের কারণে। তাদের আন্দোলনের ফলে অন্তত এবারের নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারেই স্থান দেওয়া দরকার সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি। সত্যি এটি অনেক বড় একটি অর্জন। এজন্য আন্দোলনকারী কিশোরদের তো বটেই, ধন্যবাদ দিতে হয় আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও। কারণ জনগণের এ দাবির তারা মূল্যায়ন করেছেন। সরকার গঠনের পর তাদের কর্মকাণ্ডে এ দাবির পূর্ণ মূল্যায়ন হবে বলেও আমরা আশা রাখি। যদি দেশের নিরাপদ সড়ক বিষয়টি সব সুশীলসমাজ তাদের সুদৃষ্টিতে দেখভাল করেন।

সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি একটি বিষয় বলতেই হচ্ছে, যা আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের সংসদ সদস্যরাই দেশের আইনপ্রণেতা। যারা দেশের আইন প্রণয়ন করবেন, তাদের ব্যক্তিজীবনে আইনের বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। তবে হ্যাঁ, নির্বাচনি ইশতেহারে বা মার্কা বরাদ্দ দেওয়ার দিন, যদি সব প্রার্থীর কাছে থেকে হেলমেটবিহীন শোডাউন থেকে তার সার্পোটারদের বিরত রাখবে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র নেওয়া হতো তাহলে আশা করা যেত শতভাগ আমরা সফলতার চূড়ায় পৌঁছে যেতাম। এজন্য এখন তারা যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা তাদের আচার-আচরণে ফুটিয়ে তোলা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েকদিনের নির্বাচনি প্রচারণায় মোটরসাইকেলে শোডাউন করতে দেখা গেছে প্রায় সব সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে আমরা লক্ষ্য করেছি, এসব মোটরসাইকেল শোডাউনের অধিকাংশ চালক ও আরোহীর মাথায় হেলমেট নেই, যা ট্রাফিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আইন লঙ্ঘন করে হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেলের নির্বাচনি শোডাউনের এসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের সংস্কৃতি পুনরায় ছড়িয়ে পড়ছে বলেও আমরা মনে করছি। একইসঙ্গে আইন প্রণেতাদের এমন বেখেয়ালি আচরণ সাধারণ মানুষের মনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলেও আশঙ্কা করছি। তাই একজন সচেতন নাগরিক ও নিরাপদ সড়ক প্রত্যাশী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও সংসদ সদস্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান- সড়কে নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আপনাদের কর্মকাণ্ডেও ট্রাফিক আইন মানার বিষয়টি যেন প্রাধান্য পায়। একইসঙ্গে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে যারা নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে করে আমরা আইনকে অমান্য করার মতো কর্মের মধ্যে যেন না পড়ে, সেদিকটা নজরদারি সর্বক্ষণ রাখার জন্য আকুল আবেদন করছি। যাতে আমাদের আগামীর প্রজন্ম আমাদের আচারণিক বা ব্যবহার থেকে অন্যরকম কোনো শিক্ষা গ্রহণ না করে, যাতে করে সমাজে তা অন্যায়ের প্রতিস্থাপন স্বরূপ ব্যবহার হয়।