ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হরহামেশা স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি

স্বাধীনতার ৫২ বছরে বেড়েছে ৭০২ গুণ
হরহামেশা স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি

হরহামেশাই বাড়ছে স্বর্ণের দাম। স্বর্ণ বিলাসিতার পণ্য না হয়ে নিত্যপণ্য হলে মানুষের মধ্যে হাহাকার পড়ে যেত। স্বর্ণ মূল্যবান ধাতু হওয়ায় মানুষ বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া স্বর্ণের অলংকার পড়েন না। বিয়েশাদী কিংবা আপনজনকে উপহার দেয়ার জন্য মানুষ সোনা-গহনা কিনে থাকে। আবার স্বর্ণের অলংকার কাউকে উপহার দিলে সে তা পড়ে খুব একটা ঘরের বাইরে বের হয় না। কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে পরিধান করে। স্বর্ণের গহনা পরে যাতায়াত করাও ঝুঁকি। কেননা ছিনতাইকারীর ভয়। অনেকে ইমিটেশন পরিধান করে ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান’। তবে সেটা পরিধান করাও কম ঝুঁকির নয়। কেননা ছিনতাইকারী যদি বুঝতে পারে যে, সেটা স্বর্ণ নয় ইমিটেশন, তাহলে তারা রক্তাক্ত পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধাবোধ করে না। স্বর্ণের গহনা পছন্দ করে না এমন মানুষ আমাদের সমাজে নেই। বিয়েশাদীতে বিত্ত-বৈভব মাপার একমাত্র মাফকাঠি হচ্ছে স্বর্ণের অলংকার। কার বিয়েতে কত ভরি স্বর্ণের অলংকার পাওয়া গেল সেই হিসেব অনেকেই করেন। তবে স্বর্ণের বাজার কোনো সময় স্থিতিশীল হচ্ছে না। কখনো কখনো দাম কমে। তবে তার পরিমাণ যতটা কম, বাড়ার সময় তার পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। আর সে কারণেই কন্যাসন্তানদের অভিভাবকদের চিন্তা বাড়ে। দেশের বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম বাড়ায় ছয় দিনের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম আবারো বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকা। গতকাল থেকে এ দাম কার্যকর হয়েছে। আগের দিন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) এক বৈঠক করে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে স্বর্ণের অলংকার কিনতে ক্রেতাদের বাজুস নির্ধারিত দাম থেকেও বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করা হয়। সেই সঙ্গে ভরিপ্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে নতুন দাম অনুযায়ী এক ভরি স্বর্ণের অলংকার কিনতে ক্রেতাদের প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার বেশি গুনতে হবে। স্বর্ণের দামের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা মানে স্বর্ণের বাজারে সুদিন। যত বেশি মূল্যস্ফীতি, তত বেশি স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি। ঐতিহাসিকভাবেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে স্বর্ণের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সেটিই ছিল এত দিন ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায়, মানে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭২ ডলারে উঠেছে। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পরে দুই মাস ধরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। গত মাসে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে ১ ডিসেম্বর আবারো ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। ওই দিন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম একলাফে ৩২ ডলার বৃদ্ধি পায়। যদিও তারপর দাম কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ২৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমবর্ধমান মার্কিন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে হতাশায় রয়েছে। এ কারণে তারা আগামী এক বছরের মধ্যে স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়াতে চায়। এর ফলে আগামী বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক খাত থেকেই স্বর্ণের জন্য উচ্চ চাহিদা থাকবে। স্বর্ণের দামের সঙ্গে চাহিদা ও জোগানের সম্পর্ক আছে। স্বর্ণের চাহিদা মূলত দুইভাবে তৈরি হয়। যেমন গয়নার চাহিদা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। গয়না হিসেবে স্বর্ণ বেশি ব্যবহার করা হয় চীন ও ভারতে। পশ্চিমা দেশগুলোয়ও গয়নার ভালো চাহিদা আছে। চাহিদার মতো সরবরাহও নিশ্চিত হয় দুইভাবে। খনি থেকে নতুন উত্তোলন এবং পুরোনো স্বর্ণ বিক্রি। যদিও স্বর্ণ খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক গোল্ড কাউন্সিলের হিসাবে, গত ২০২২ সালে খনি থেকে ৩ হাজার ৬২৪ টন স্বর্ণ উত্তোলন হয়। আর পুরোনো স্বর্ণ থেকে পাওয়া যায় ১ হাজার ১৪০ টন। অন্যদিকে গয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ২ হাজার ১৯৫ টন স্বর্ণ। এছাড়া বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১ হাজার ১১৩ টন। আর বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ হাজার ৮২ টন স্বর্ণের বার ও মুদ্রায় বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের বিপুল চাহিদা ও জোগানের ভিড়ে বাংলাদেশের বাজার খুবই ছোট। এখানে সুনির্দিষ্ট হিসাবও নেই। তবে মনে করা হয়, দেশে বছরে ২০-৪০ টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। এর মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয় পুরোনো অলংকার দিয়ে। বাকিটা ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আসে। অবৈধভাবেও প্রচুর স্বর্ণ আসে। জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরাতে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হয়। শুরুতে কিছু আমদানি হলেও নানা জটিলতায় পরে তা শ্লথ হয়ে যায়। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় বিশ্ববাজারের তুলনায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা বেশি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগের বছর স্বর্ণের ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। তার মানে গত ৫২ বছরে দাম বেড়েছে ৭০২ গুণ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত