ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় ৮৩ শতাংশ ভবনের বিপরীতে সবুজায়ন রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ

বাপ্পি সরদার, লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদ।
ঢাকায় ৮৩ শতাংশ ভবনের বিপরীতে সবুজায়ন রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ

স্বপ্নের শহর ঢাকা। লাল-নীল বাতির মোহে গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমায় লাখ লাখ স্বপ্নবাজ মানুষ। ছোট্ট এ শহরে আয়তনের বিপরীতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই নগরীর বুকে। পরিবেশ দূষণের ফলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক রাজধানী ঢাকা। বসবাসযোগ্য শহরের তলানিতে রয়েছে ঢাকার অবস্থান। পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদের গবেষণায় উঠে এসেছে ৮৩ শতাংশ ভবনের বিপরীতে ঢাকা শহরে রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ সবুজায়ন। বিগত ২০ বছরে ঢাকা শহরে স্থাপত্য নির্মাণ বৃদ্ধি পেলেও কমেছে জলাশয় ও ফাঁকা জায়গা। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠনের তৎপরতায় শহরের জনগণ পরিবেশের বিপর্যয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়ায় সবুজায়নের প্রতি দিন দিন গুরুত্ব দিচ্ছে। সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ঢাকা শহরের প্রায় ৭০ ভাগ পাকা ঘরবাড়ি আচ্ছাদিত ছিল। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৩ ভাগ। বিগত সময়ে জলাশয় ও খোলা জায়গা প্রায় ১৫ ভাগ থেকে কমে ৬ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। তবে সবুজায়ন বেড়েছে ৫ ভাগ। রাজধানীর ৩০৫.৮৭১ বর্গ কিলোমিটারের ১৩৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবুজ এলাকা জলাশয় খোলা উদ্যান ও স্থাপনা নির্মাণ বিবেচনায় রিমোট সেন্সিং ইমেজ বিশ্লেষণ ও জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের এই সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী ঢাকা শহরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রমনা পার্ক, মগবাজার, লালবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বসিলা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দুয়ারীপাড়া, রাজাবাজার, ইন্দিরা রোড, শেরেবাংলা নগর ও মিরপুর সেনানিবাস এলাকায় সবুজায়নের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো। যে কোনো শহরকে বসবাসের উপযোগ্য রাখতে মোট ভূমির ১৫-২০ শতাংশ সবুজ ভূমি, ১০-১৫ ভাগ জলাশয় এবং হাঁটা দূরত্ব বজায় রাখতে পার্ক কিংবা খোলা জায়গা আবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীতে ৮৩ শতাংশই দালানকোঠা থাকায় মাত্র ২ শতাংশ সবুজ অবশিষ্ট রয়েছে। সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো: ১. সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে ঢাকার চারপাশে বহমান নদী ও খালের পাড় জুড়ে, রেলের পতিত জমি ও রেললাইনের দুই ধারে ও অনুমোদিত সব আবাসন প্রকল্পে ২৫ শতাংশ বনায়ন নিশ্চিত করা। ২. নদী ও খালের পানিকে দূষণ মুক্ত রাখতে ইটিপি ফর্মুলা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. শহরের সব মার্কেট ও দোকানের সামনে ন্যূনতম দুটি করে গাছের টব ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ছাদ-কৃষি ও ছাদ-বাগান বৃদ্ধিকরণ। ৪. বায়ু দূষণ সংক্রান্ত আইন-২০১৯ বাস্তবায়ন এবং বায়ু দূষণ কমাতে শহরের চারপাশে অবস্থিত সব ইটভাটা বন্ধ, শহরের রাস্তাকে দিনে দুইবার ঝাড়ু ও সপ্তাহে একদিন পানি দিয়ে ধৌত নিশ্চিত করা। ৫. ঢাকার শহরের সব খাল দখল মুক্ত করা, খাল খনন এবং শহরের চার পাশের নদীর ব্যবহার বাড়াতে বেসরকারিভাবে নৌযান চলাচল বাড়াতে হবে। ৬. বর্জ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ই-বর্জ্য রাখার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে এবং মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনসিনেরেটর ব্যবহার করা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. শিক্ষাক্ষেত্রের সর্বস্তরে পাঠ্যসূচিতে পরিবেশ শিক্ষা ও আইন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৮. ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে মানসম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আগামী প্রজন্মের নিরাপদ বাসযোগ্য স্বপ্নের ঢাকা শহর গড়তে আসুন এখনই সচেতন হই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত