বাড়ছে করোনা শনাক্তের হার

সচেতন না হলে আবার ভোগান্তি বাড়বে

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বৈশ্বিক অতিমারি করোনা আবার চোখ রাঙাচ্ছে। প্রথম দিকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। তবে যখন মানুষ করেনার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারল তখন মানুষের ঘুম ভাঙল। প্রতিদিন যখন বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে থাকল, তখন সংকট দেখা দিল চিকিৎসাসেবা দিতে। করোনার চিকিৎসা ব্যয় এত বেশি ছিল, তা নির্বাহ করার মতো সক্ষমতা অধিকাংশ মানুষের ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও করোনার প্রাণহানি রোধ করা যায়নি। বাংলাদেশ সরকার করোনা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে বিনা পয়সায় টিকার ব্যবস্থা করল। একে একে কয়েক ডোজ টিকা নেয়ার পর অনেকে বুস্টার ডোজ টিকা নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত জীবন কাটালেও সেই করোনাভাইরাসের শনাক্তের হার এখন আবার বাড়ছে। এটা রীতিমতো আতংকের ব্যাপার। করোনা মানুষের জীবনযাপনের ওপর কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা অনেকের স্মরণে রয়েছে। আবার যদি সেই অবস্থায় আমরা ফিরে যাই তা হলে আমাদের জীবন-জীবিকা আবার অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। আবার আমরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পেছনের দিকে চলে যাব। তাই এখনই সতর্ক হতে হবে। করোনা চলাকালে যেসব বিধিনিষেধ মানুষ অনুস্মরণ করা হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা সম্ভব না হলেও মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের মেনে চলা দরকার। বিশেষ করে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা, মুখে মাস্ক পরা এবং বারবার হাত ধোয়া। আপাতত এই তিনটি বিষয় মেনে চলার জন্য মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করা যেতে পারে। তা না হলে হয়তো আবার আমরা হয়তো সেই দুরস্থার মধ্যে পড়ে যাব। দীর্ঘ সময় করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশের আশপাশে ছিল। তবে হঠাৎ করে শনাক্তের হার বেড়ে ২ শতাংশের বেশি হয়েছে। এটা রীতিমতো আতংকের। তবে আশার কথা হচ্ছে, করোনার নতুন ধরনে কারো মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৪৭৭ জন, আর শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ জন। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, বিশ্বজুড়ে ফের শুরু হয়েছে প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ। বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে করোনার নতুন ঢেউ। গত এক মাসে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে ৫২ শতাংশ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। নভেম্বর থেকে নতুন করে ৩ হাজার করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সব দেশে বিকশিত, পরিবর্তন ও সঞ্চালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেছেন অবশ্যই ঝুঁকি রয়েছে। প্রথমেই আমাদের শনাক্ত করা দরকার এই ধরন আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে কি না। ঢুকলে কতজন এবং কারা আক্রান্ত হচ্ছেন, যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সিভিয়ারিটি কেমন- এই ধরনের কোনো ডাটা তৈরি করতে পারলে তার ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে পারি। নতুন এই উপধরনে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের টিকার অবস্থা কী। যারা এক ডোজ, দুই ডোজ কিংবা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন এবং যারা টিকার কোনো ডোজ নেননি, তাদের অবস্থা কী, সেটা দেখা। সার্ভিলেন্স অনুযায়ী পরিস্থিতি বুঝে আগামী পাঁচণ্ডছয় মাসের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং পাশাপাশি বিশ্বের দিকে নজর রাখা- করোনা পরিস্থিতি কোনো দিকে যাচ্ছে। সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা যেন দেশে পরিকল্পনা নিতে পারি। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, বর্তমানে এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত আসছে। এ বিষয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো আমরা পরামর্শ কমিটি বসব। এর মধ্যে নতুন কোনো অগ্রগতি রয়েছে কি না, আমরা দেখব। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হবে একটু সতর্ক থাকা। বর্তমানে আমরা অনেকেই করোনা টেস্ট করিনি। কিন্তু কারো উপসর্গ থাকলে করোনা টেস্ট করানো উচিত। করোনা পজিটিভের একটা অংশ যদি আমরা জিনোম সিকোয়েন্স করে দেখি ওই উপধরনটির উপস্থিতি এই দেশে রয়েছে কি না- এটা জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। করোনার নতুন ধরনটি বাংলাদেশে এসেছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া দরকার। যদি এসে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।