ফুটপাতে শীতের পিঠার ব্যবসা

পিঠা উৎসব ও পিঠা মেলার প্রতি বাড়ছে আগ্রহ

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এখন শীতকাল চলছে। শীতকালে আমাদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অনেক ভিন্নমাত্রা পায়। শীতের সতেজ শাকসবজি আমাদের যেমন আকৃষ্ট করে, ঠিক তেমনি শীতের পিঠাও আমাদের জন্য বাড়তি আনন্দ এনে দেয়। তবে সংকট হচ্ছে চাহিদা ও পছন্দ মতো শীতের পিঠা সংগ্রহ করা অনেকটা কষ্টকর। নগরী জীবনে শীতের পিঠা তৈরি করে খাওয়ার মতো অবস্থা অনেক পরিবারেরই নেই। আর সে কারণে শীতকালে বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসব বা পিঠা মেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ে এবং মানুষ সেখান থেকে পিঠা সংগ্রহ করে থাকে। শীতের পিঠা তৈরি করার মতো কোনো ব্যবস্থা আমাদের নগর জীবনে খুব একটা নেই। গ্রামীণ জীবনেও শীতকালে তেমন একটা পিঠা-পায়েসের আয়োজন এখন আর করা হয় না। পিঠা কীভাবে তৈরি করা হয়, সে বিষয়টিও অনেক গৃহিণী জানেন না। অথচ সন্তানকে শীতের পিঠা খাওয়াতে হবে। আমাদের ব্যস্ত জীবনে নিয়মিত রান্না করে খাওয়ার মতো সময়ের অভাবে অনেকে হোম ডেলিভেরি নিয়ে খাবার খান। শীতের পিঠা তৈরি করার মতো সময় ও তৈরির কৌশল না জানার কারণে নগরবাসী দোকান কিংবা ফুটপাতের দোকানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। মানুষ স্থায়ী দোকান কিংবা ফুটপাতের দোকান থেকে প্রতিনিয়ত শীতের পিঠা কিনে তার সন্তানদের রসনা মেটাচ্ছে। সন্তানরাও দোকানের পিঠা খেয়ে আত্মতৃপ্ত হচ্ছে। তবে ঘরের তৈরি শীতের পিঠা খাওয়ার জন্য গ্রামে যাওয়ার সুযোগও অনেকের নেই। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে কেউ কেউ বাসাবাড়িতে শীতে পিঠা তৈরির আয়োজন করেন। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। নগরজীবনে শীতের পিঠা খাওয়ার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য মানুষ বাসাবাড়ির বাইরে পিঠা দোকানের সন্ধান করছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগর-মহানগরের বাইরে জেলা শহরেও ফুটপাতে শীতের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালে ঐতিহ্যবাহী বাংলার পিঠা খাওয়া হবে না, এটা অকল্পনীয়। শীতের পিঠা আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটা ঐতিহ্য। নগর এলাকায় প্রচুর পিঠার দোকান দেখা যায়। সেখানে নানা রকম পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। শিশু কিশোর ও বয়স্করাসহ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এসব দোকানের নিয়মিত ক্রেতা।

সকাল হলে এক রকমের এবং বিকাল হলে আরেক রকমের পিঠা খাওয়ার জন্য মানুষ ভিড় করেন। দামও খুব একটা বেশি নয়। তাই এসব দোকানে প্রতিনিয়তই বাড়ছে পিঠার স্বাদ গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা। কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বা বসে আবার কেউ পিঠা বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। সন্ধ্যায় পিঠার দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ে বিক্রেতারাও ব্যস্ত সময় কাটান। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ও পুলি পিঠাসহ নানান ধরনের শীতের পিঠা পাওয়া যায় আমাদের আশপাশের দোকান ও ফুটপাতে। ফুটপাতের দোকানের পিঠা তেমন একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, এটা জানার পর মানুষ খাচ্ছে। শীতে পিঠার লোভ সামলানো অনেকের জন্য কঠিন। প্রত্যেক দেশেরই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিজাতীয় খাবার থাকে, এটা তাদের নিজস্ব ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে পিঠা। আমাদের জন্য পিঠা শুধু একটি খাবারই নয়, স্মৃতির ভাণ্ডারও বটে। শৈশবে শীতকাল মানেই যেন ছিল মায়ের হাতের বিভিন্ন স্বাদ ও নকশার পিঠা। আর সেই পিঠাগুলোর পেছনে থাকে নানা ইতিহাস-ঐতিহ্য। ধোঁয়া উঠা গরম চিতই পিঠার সঙ্গে যে কোনো মাংস সে তো মজাদার খাবার। এখন শীতকালে শহরের অনেক স্থানে ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানে চিতই পিঠা বিক্রি করা হয়। সঙ্গে থাকে হরেক রকমের ভর্তার সমাহার। থাকে চিংড়ি, সরিষা, শুঁটকি, ধনে পাতাসহ অসংখ্য স্বাদের ভর্তা। আর যারা মিষ্টিপ্রেমী তাদের জন্য রয়েছে গুড়, মালাই ও নারকেলে ভরা গরম গরম ভাপা পিঠা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়া এবং বাসায় ফেরার পথে পরিবারের জন্য পিঠা কিনে নেয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে এক রকমের আনন্দ কাজ করে। তবে এগুলো ছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে হরেক রকমের পিঠা পাওয়া যায়। শীতকালে আমাদের দেশে বিয়ে অনুষ্ঠানে পিঠা পরিবেশন করা হয়। এটা বিয়েশাদির একটা বাড়তি আনন্দ। শহরের বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসব বা পিঠা মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে মানুষ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা দেখতে এবং খেতে আসে। আমাদের কাছে পিঠা শুধু একটি খাবার নয়, এটি রন্ধন শিল্প, ঐতিহ্য এবং আনন্দের সংমিশ্রণ। সবাই শীতে পিঠার স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ পাবে, সেটাই হবে শীতের বাড়তি আনন্দ।