ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানুষের কল্যাণ কামনা করুন

জাফর আহমাদ
মানুষের কল্যাণ কামনা করুন

মানুষকে কষ্ট দিবেন না। বরং মানবতার কষ্ট লাঘব করুন। আপনার দুনিয়া ও আখিরাত জীবন সুন্দর ও সাবলিল হবে। মানুষের ভালোবাসায় আপনার হৃদয় সিক্ত হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতি, মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদের প্রেরণ করা হয়েছে।’

(সুরা আলে ইমরান:১১০) অর্থাৎ নৈতিক চরিত্র ও কার্যকলাপের দিক দিয়ে এখন তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম মানব গোষ্ঠী। তোমাদের মধ্যে ন্যায় ও সৎবৃত্তির প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসৎবৃত্তির মুলোৎপাটন করার মনোভাব ও কর্মস্পৃহা সৃষ্টি হয়ে গেছে। কাজেই মানবতার কল্যাণের দায়ভার তোমাদের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা পৃথিবীতে যা-ই করবে তাতে মানুষের কল্যাণের দিকটি সর্বপ্রথম বিবেচনায় আনতে হবে। এমন কোনো আচরণ এমন কোনো কাজ করা যাবে না যার দ্বারা মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এটি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রযোজ্য। প্রত্যেকে যার তার আঙিনা থেকে অবশ্যই মানুষের কল্যাণের নিমিত্তে কাজ করতে হবে। এ দায়ভার এড়াবার সুযোগ কারো নেই। এমন কথাও বলা যাবে না যার দ্বারা মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে পথ হারিয়ে হয়রানির স্বীকার হয়।

এমন কাজ করা যাবে না যার জন্য মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। কল্যাণ কামনা গুণীদের ভাষায় মানুষের মৌলিক চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। ‘কল্যাণ কামনা’ মুমিনের এমন এক মহত ও দুর্লভ গুণ, এটি যার চরিত্রে বিরাজ করে তার চারিত্রিক সৌন্দর্য ফুলে-ফলে সুশোভিত হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যিনি অন্যের কল্যাণ কামনা করেন তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে কতগুলো অসৎ গুণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। যেমন, যিনি অন্যের কল্যাণ কামনা করেন তিনি সাধারণত নির্লোভী, নিরহংকারী ও নিঃস্বার্থবাদী স্বভাবের হন, কারণ লোভী, অহংকারী ও স্বার্থবাদী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কখনো অন্যের কল্যাণ কামনা করতে পারে না। অন্য ভাইয়ের কল্যাণ কামনা মানে অন্যকে ভালোবাসা। অন্যকে ভালোবাসা কোনো ছেলেখেলা নয়, অবশ্যই এটি একটি কঠিন বিষয়। কিন্তু কল্যাণকামী মুমিনের জন্য এটি খুবই সহজ একটি বিষয়। কারণ তাদের ওপর আল্লাহর অবারিত রহমত বর্ষিত হতে থাকে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বন্ধু। এদের পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।’ (তাওবা-৭১)

ইসলাম কল্যাণধর্মী জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের অনুসারী হিসাবে মানুষ কল্যাণকামী জীব। এ জীবন ব্যবস্থা বিশ্বজাহান ও মানব প্রকৃতির সাথে অধিকতর সামঞ্জশীল বিধায় এর পরতে পরতে মানুষের জন্য কল্যাণ আর কল্যাণ নিহিত রয়েছে, কোথাও অশান্তি নেই, নেই অকল্যাণ। কিন্তু মানুষ শুধু শুধুই মস্তিষ্কপ্রসূত জীবন ব্যবস্থার অন্ধকার গলিতে শান্তি ও কল্যাণের খোঁজে সমুদ্রসম পথ পাড়ি দিয়েছে, শান্তির দেখা তো মিলেই-নি, বরং উল্টো মানবতাকে শুধু যন্ত্রণাই পোহাতে হয়েছে, পৃথিবী বার বার প্রতারিত হয়েছে। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য জীবন ব্যবস্থা তার অনুসারীদের লোভণ্ডলালসা, স্বার্থবাদী ও হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ জীবের দীক্ষা দিয়েছে। তারা পূঁজিবাদী মতবাদের সুদ দ্বারা স্বার্থান্ধ, লোভী ও অন্যকে শোষণের মন্ত্র শিখিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদের পাহাড় দাঁড় করিয়েছে। ফলে পারস্পরিক কল্যাণ কামনা তো দূরের কথা, বরং সামাজিক সহমর্মিতা ও সহাবস্থানের কলাণকামী প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে।

পুঁজিবাদের বিপরীতধর্মী অন্য এক আজিব মতবাদ হলো সমাজতন্ত্র। এ মতবাদ মানুষকে মানুষের শোষণ থেকে উদ্ধারের চটক দেখিয়ে এবং সমাজের উঁচু-নিচু সমান করার ব্যর্থ মানসে স্বাধীন মানুষকে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় খোয়ারে আবদ্ধ করল। মানুষের সব মানবীয় যোগ্যতা ও বৃত্তিকে অস্বীকার ও দমন করা হলো। সবাইকে একই ডান্ডাভেরি লাগিয়ে গরুর খোয়াড়ের ন্যায় একই খাদ্য পরিবেশন করা হলো। ফলে ভাঙ্গল পরিবার, ভাঙ্গল সমাজ সভ্যতা ও মানুষের সামাজিক সম্পর্ক।

কল্যাণ কামনার গুণটি এখানে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ল। ইসলাম এতদুভয়ের মাঝে এমন এক সুষম জীবন ব্যবস্থা পেশ করলো যেটি পূঁজিবাদ ও সমাজবাদের চরমপন্থা ও প্রান্তিকতার পথকে এড়িয়ে মধ্যমপন্থার নীতি অনুসরণ করল। একদিকে ব্যক্তিকে নৈতিকতার অধীনে থেকে ধন-দৌলত উপার্জনে অবাধ স্বাধীনতা দান করল, অন্যদিকে ব্যক্তির ধন-দৌলতে সমাজের অধিকার কায়েম করল। মুমিনের পরিচয় হলো তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের অবস্থা এই যে, তারা একে অপরের দুঃখে দুঃখিত হয় এবং একে অপরকে দুঃখে-বিপদে সাহায্য করে।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মুমিন অন্য মুমিনের সাথে সম্পর্ক হচ্ছে- অট্টালিকার একটি ইটের সাথে অন্য ইটের সম্পর্কের ন্যায়। এই বলে তিনি তার এক হাতের অঙুলিগুলো অন্য হাতের অঙুলির ভেতর প্রবিষ্ট করে দেখিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, মুমিনগণ পারস্পরিক স্নেহ-মমতা ও মায়া-মহব্বতের দিক দিয়ে একটি দেহের সমতুল্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত