ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অধিক রেমিট্যান্স অর্জনে দরকার প্রশিক্ষিত জনশক্তি

জিল্লুর রহমান
অধিক রেমিট্যান্স অর্জনে দরকার প্রশিক্ষিত জনশক্তি

প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সব সদস্যভুক্ত দেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বব্যাপী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি। ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় ৪৫/১৫৮ নম্বর প্রস্তাব আকারে আন্তর্জাতিক চুক্তি গ্রহণ করে। অভিবাসীদের মাধ্যমে অর্জিত হয় রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হল রেমিট্যান্স। আর রেমিট্যান্স হল দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের ভিত্তি, স্বপ্নের সোনালি সোপান ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে শক্তিশালী রেমিট্যান্সের জন্য দরকার দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি। আর দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেই অভিবাসন হওয়া দরকার কিন্তু বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের বিশেষ চাহিদা থাকায় অনেক শ্রমিক অভিবাসন করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা অতি সামান্য যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করে অথবা একেবারেই অদক্ষ হয়ে অভিবাসন করছে। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত কাজে যুক্ত হতে পারছে না। দক্ষতার অভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে তারা নানা অপব্যবহার ও বহুবিদ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটু সচেতন হলেই এই অপব্যবহার ও নির্যাতন রোধ করা সম্ভব। অধিক দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনিভাবে যে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়তেও তাদের সাহস জোগায়। আসলে অভিবাসীদের বিদেশে গমনের আগে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা হলো- যে কাজ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে সেই কাজের প্রকৃতি ও ধরন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা এবং একই সঙ্গে সেই কাজের প্রতি আগ্রহ থাকা। গন্তব্য দেশে পৌঁছানোর পর দক্ষতার সঙ্গে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করা। নিজের দক্ষতাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শাণিত এবং বৃদ্ধি করা। চাকরিদাতার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা এবং যথাযথ কাঙ্ক্ষিত আচরণ প্রদর্শন করা। গন্তব্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং মেনে চলা। গন্তব্য দেশে অপরাধমূলক, অবৈধ ও অসামাজিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া এবং কষ্টার্জিত টাকা দেশে পাঠিয়ে যথাযথভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করা। বিদেশে দক্ষতা ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করে দেশের সম্মান ও সুনাম বৃদ্ধি করা। শিল্প বিপ্লবের যুগে দক্ষতাকে কাজের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে যত দ্রুত প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা যাবে যুগের সঙ্গে তাল মেলানোটা ততই সহজ হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চা অপেক্ষা তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রকট প্রভাব কাজ করে। অথচ বাইরের দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দক্ষতার ওপর নির্ভর করে নিয়োগ দান করা হয়। কারিগরি দক্ষতা তথা প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে যে সকল প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতাধীন ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে দেশের অভিবাসন প্রবণ অঞ্চলগুলোতে। সরকার এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর শাখাসমূহকে উপজেলা পর্যায়ে নিতে চায়। কিন্তু এসমস্ত কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষকদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবও দূর করা উচিত। শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতিই নয় বরং অনেক অভিবাসী অভিবাসনের পূর্বে গন্তব্য দেশের ভাষা, আইন-কানুন, আবহাওয়া সম্পর্কে সামান্যই ধারণা রাখেন। বিদেশে একসময় কাজ করেছেন এমন ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসীদের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের একদিকে রয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সচেতনতার অভাব, যোগাযোগের অদক্ষতা, নির্মাণ শ্রমিকদের নিজেদের দূর্বল শারীরিক কাঠামো, খাদ্যাভাসসহ স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতি চালোনায় সিদ্ধহস্ত না হওয়া, পেশাদারি মনোভাবের অভাব। মজার বিষয় হলো এসব অভাব বা দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও এ সব অভিবাসীরা দিনের পর দিন দেশের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত